রেমিট্যান্স কমছে, কমছে রফতানি আয়। ফলে ডলারের ওপর সংকট বাড়ছে। আগামী সোমবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পেমেন্ট করতে হবে। এ পেমেন্ট মূলত মার্চ-এপ্রিল মাসের আমদানির বিল। আর বিলের পরিমাণ ১১৮ কোটি মার্কিন ডলার। এখন বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৩০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৩ হাজার ৯৮ কোটি ডলার। বিল পরিশোধ করার পর রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাবে। রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের মাসে প্রতিদিন সাড়ে ৬ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছিলেন প্রবাসীরা। এ রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবাহ দেখে মনে করা হয়েছিল এপ্রিলেও ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। রেমিট্যান্স প্রবাহে ছন্দপতন হয়েছে। অর্থাৎ মাস শেষে আসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকার বেশি। এ হিসাব করা হয়েছে প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে।
এদিকে রেমিট্যান্সের পর বিদায়ী এপ্রিল মাসে কমেছে রফতানি আয়। এ মাসে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৫ কোটি ডলার। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। রফতানি আয় কমে যাওয়ার কারণও চিহ্নিত করেছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। প্রতিষ্ঠান দুটি মনে করছে, রফতানি আয় কমে যাওয়ার মূল কারণ বিশ্ববাজার থেকে আগের তুলনায় নতুন কার্যাদেশ কমে যাওয়া। এ ছাড়াও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটকে কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ এখনও বিনিময় হার ঠিক না হওয়া। এটি এখনও অতিমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। আর রফতানি আয় কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ, যারা রফতানি করছেন তাদের অনেকে দেশে টাকা আনেন না। আরও একটা কারণ হতে পারে আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে অনেকে দেশে টাকা আনতে আগ্রহী হচ্ছে না। এ ছাড়াও হুন্ডি তো রয়েছেই। এতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই খুব অল্প সময়ে টাকা প্রাপকের কাছে চলে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এসেছে। আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এ ছাড়াও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।
রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণে ডলার সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকার ফলে আমদানি ব্যয় কমেনি। এ ছাড়াও বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। ফলে রিজার্ভ সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, রিজার্ভ কমে যাবে। তবে আকু পেমেন্টের পর যে রিজার্ভ থাকবে তা দিয়ে সাড়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। রিজার্ভ কমে গেলেও পরে আস্তে আস্তে বিল্ডআপ হবে। কিন্তু রফতানি আয় আর রেমিট্যান্স না বাড়াতে পারলে রিজার্ভ সেভাবে বিল্ডআপ হবে না। ফলে ডলার সংকট হতে পারে। এ জন্য রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।