প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যালে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শুধুমাত্র মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিবেদিত ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ রাখার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদিসহ অনেক গতিশীল ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশে সুযোগ অন্বেষণ ও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (২ মে) ‘ইউএস-বাংলাদেশ ইকোনমিক পার্টনারশিপ: শেয়ার্ড ভিশন ফর স্মার্ট গ্রোথ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিলের মূল বক্তব্য উপস্থাপনের সময় একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মার্কিন ব্যবসায়ীদের বলেন, আপনারা বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ওষুধ, হালকা ও ভারী মেশিন, রাসায়নিক, সার, তথ্যপ্রযুক্তি, সমুদ্র সম্পদ, চিকিৎসাসরঞ্জামসহ আমাদের অনেক সম্ভাবনাময় সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ছাড়া আরও কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায়, তার সুযোগ ও সম্ভাব্যতাও অনুসন্ধান করতে পারেন। আমরা মনে করি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক এবং উন্নয়ন অংশীদার। বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করছি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ নীতিতে উদার পলিসি অবলম্বন করে। কর মওকুফ, রেমিটেন্স রয়্যালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তনসহ আইন দ্বারা বিদেশী বিনিয়োগে আমরা সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি। আমরা ক্রমাগত ব্যবসার পরিবেশকে উন্নত করাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’ বাস্তবায়ন করছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে। বর্তমানে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং পারস্পরিক স্বার্থে শৃঙ্খলা তৈরির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদনশীল অংশীদার হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের ভিশন ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া। স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিকগণ হবেন স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট ইকোনোমি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ থাকবে।
উচ্চ পর্যায়ের এ গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (সাউথ এশিয়া) অ্যাম্বাসেডর অতুল কেশপ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল বোর্ডের পরিচালন পর্ষদের চেয়ারম্যান স্টিভেন কোবোস, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস হ্যান্স-পল বার্কনার, মাস্টারকার্ডের গ্লোবাল পাবলিক পলিসি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি অপারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রবি অরোরা, বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এরিক ওয়াকার এবং এক্সনমোবিলের গ্লোবাল হেড অব এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড নিউ ভেঞ্চার ডক্টর জন আরডিল।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।