ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভোগান্তি কমে মিলবে স্বস্তি

পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে আসছে কয়েকদিন ধরে নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটবে মানুষ। তাদের ঈদযাত্রা স্বাভাবিক করতে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। এসব উদ্যোগ নেওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির। তবে এশিয়ান হাইওয়ে অপ্রশস্ত ও চার লেনের উন্নীতকরণ কাজ চলায় যানজট হবে। সেইসঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ছয় লেনের উন্নীতকরণ কাজের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হবে যাত্রীদের।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। পাশাপাশি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দিয়েও হাজার হাজার মানুষজন যাতায়াত করেন।

হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজটের স্থান হিসেবে শিমরাইল, মদনপুর, মোগরাপাড়া এবং মেঘনা টোলপ্লাজাকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সেইসঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর, তারাব বিশ্বরোড, রূপসী মোড়, বরপা ও ভুলতা মোড়কে চিহ্নিত করেছে তারা। এসব স্থানে যানজট নিরসন করে ঈদযাত্রা স্বস্তির করা হবে। তবে এশিয়ান হাইওয়ে অপ্রশস্ত ও চার লেনের কাজ চলায় যানজট সৃষ্টি হবে।

একইভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ছয় লেনের কাজ চলছে। ফলে শিবু মার্কেট, জালকুড়িসহ বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হবে ঈদযাত্রায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, দূরপাল্লার যানবাহনগুলো পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে উভয় লেনে ঢুকে পড়া, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল, সড়কের একাংশ দখল করে বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড ও বাজার গড়ে ওঠার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়।

চাষাঢ়া-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সৌদিয়া পরিবহনের চালক মনির মিয়া বলেন, ‘আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের যানজট। সংস্কারকাজের জন্য সড়কে নিয়মিত যানজট তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল, মোগরাপাড়া, মেঘনা টোলপ্লাজা ও মদনপুর এলাকায় প্রায় সময় যানজট সৃষ্টি হয়। তবে এখন মহাসড়কে যানজট আগের চেয়ে কমেছে। এসব স্থানে হাইওয়ে পুলিশ কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হবে না।’

ময়মনসিংহ থেকে এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে নিয়মিত চট্টগ্রামে মালামাল বহন করেন কাভার্ডভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই সড়কে প্রতিদিন যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে, ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এ কারণে কোনোদিনও সময়মতো মালামাল নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনি।’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন বন্দরের বাসিন্দা সালাম মিয়া। তিনি বলেন, ‘ভুলতা-গোলাকান্দাইল এলাকায় নিয়মিত যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি পয়েন্টে প্রায় সময় যানজট ও ধীরগতি লেগেই থাকে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসন প্রসঙ্গে কাঁচপুর থানা হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ঈদের সময় মহাসড়কে যানজট নিরসনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত টিম, রেকার, অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হবে। বর্তমানে আমাদের ৫০ জন ফোর্স রয়েছেন। ইতোমধ্যে ১০০ জন অতিরিক্ত ফোর্স চেয়ে আবেদন করেছি। মদনপুর, কাঁচপুর, মোগরাপাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। মেঘনা টোলপ্লাজায় যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়, সে জন্য টোলপ্লাজার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শিমরাইলসহ মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টের সাইড লেনে যানবাহন থেকে যাত্রী ওঠানামা করার সময় জটলা সৃষ্টি হয়। এটি নিরসন করা হবে। সড়ক ও জনপথের পক্ষ থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ইউটার্ন ও সড়ক বিভাজনের কাজ চলছে। মহাসড়কের প্রতিদিন প্রায় ১৬ হাজার যানবাহন যাতায়াত করে, ঈদের সময়ে আরও বেড়ে যাবে। যানজট নিরসনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।’

এশিয়ান হাইওয়ে ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ের সংস্কারকাজ চলছে। সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় প্রায় সময় যানজট সৃষ্টি হয়। এ জন্য অতিরিক্ত হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। আশা করছি, এবার এই পথে ঈদযাত্রায় যানজট হবে না। উল্টো পথে চলা যানবাহন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ এবং যাত্রী ওঠানামার বিষয়ে কঠোর থাকবে পুলিশ। যানজট নিরসনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।’

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানালেন উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এক কিলোমিটার সড়কের জায়গা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ জন্য কাজে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের ওপর থাকা বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে দেরি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আমরা কাজ শেষ করতে পারছি না।’

সড়কের কাজের জন্য ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কাজ করতে গেলে তো একটু সমস্যা হবেই। তারপরও শিবু মার্কেট এলাকায় দুই পাশের সড়ক যাতায়াতের উপযোগী করে দিয়েছি। আশা করছি, ঈদে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না যাত্রীদের।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভাজনের কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাতুয়াইল এলাকায় মহাসড়কে ইউটার্ন এবং সাইনবোর্ডে ফুটওভার ব্রিজ করা হয়েছে। ফলে ওখানে যানজট নেই। ঈদযাত্রার জন্য তিনটি ইউটার্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া চিটাগাংরোড, মদনপুর, মোগরাপাড়ায় সড়ক বিভাজনের কাজ চলছে। এগুলো ঈদের আগে খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’

এশিয়ান হাইওয়েতে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সড়কটি অপ্রশস্ত ও বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করবে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের দ্বিগুণ সদস্য।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন