ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এটাকে ‘মূল্যহীন’ হিসেবে অভিহিত করেছে রাশিয়া।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা করার পর থেকেই দেশটিতে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ ওঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, শিশুদের জোরপূর্বক ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তরের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া আলেক্সেভনা লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডের হেগ ভিত্তিক এ আদালত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জোরপূর্বক ইউক্রনের নাগরিকদের (শিশুদের) নিয়ে যাওয়া এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো থেকে জোরপূর্বক নাগরিকদের (শিশুদের) রাশিয়ার নিয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে।’
বিবৃতিতে আদালত আরও বলেছেন, ‘উপরেল্লিখিত অপরাধের সঙ্গে পুতিনের সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়টি বিশ্বাস করার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সহযোগিতায় তৈরি করা একটি তদন্তে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইউক্রেনে বিস্তৃত মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে রাশিয়া, যার মধ্যে রয়েছে জোরপূর্ব শিশুদের দেশান্তরিত করা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পরই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব একটি সংকেত পেয়েছে— রাশিয়া হলো একটি অপরাধী দেশ এবং এর নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সহায়তাকারীদের তাদের সংঘটিত অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এটি ইউক্রেন এবং আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।’
তবে আইসিসির এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে মূল্যহীন হিসেবে অভিহিত করেছে রাশিয়া।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘রাশিয়া রোম সংবিধির আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কোনো সদস্য নয় এবং এর নির্দেশ মানার জন্য বাধ্য নয়। রাশিয়া এ আদালতকে কোনো সহযোগিতা করে না। আন্তর্জাতিক আদালত থেকে আসা ঠাটঠমক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইনগতভাবে আমাদের কাছে ভিত্তিহীন।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যক্রম কিভাবে চলে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অবস্থিত নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে। এটি ১৯৯৮ সালে রোম সংবিধি নামক একটি চুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়। এ আদালত স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য। আর সদস্য দেশগুলোর যে কোনো ব্যক্তির বিচার করার এখতিয়ার আছে এটির। তবে এ আদালতে বিচার করা হয় ব্যক্তির, কোনো দেশের নয়। এছাড়া যেসব ব্যক্তি অপরাধের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িত তাদের ওপরই বেশি নজর রাখা হয়।
তবে বড় বিষয় হলো— রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন কোনো দেশই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়। তবে অতীতে এ আদালতের দেওয়া রায় মেনে নিয়েছিল ইউক্রেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কারও অনুপস্থিতিতে বিচার করে না। ফলে পুতিনকে যদি বিচারের মুখোমুখি করতে হয়— তাহলে তাকে রাশিয়াকেই আদালতে সোপর্দ করতে হবে অথবা অন্য কোনো দেশে পুতিনকে আটক করে আদালতের কাছে তুলে দিতে হবে।
আইসিসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে যেতে পুতিন ভয় পাবেন?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে যেতে এখন পুতিন ভয় পাবেন কিনা? এমন প্রশ্ন করা হয় রুশ প্রেসিডেন্ট দপ্তরের মুখপাত্র দিমিত্রো পেসকোভের কাছে। এর জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমরা আইসিসির সদস্য নয়। রাশিয়ার কাছে এটি ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলার নেই আমার।’
সূত্র : সিএনএন, আল জাজিরা