সিলেটে শুরু হলো চার দিনব্যাপী বিভাগীয় পিঠা উৎসব। সিলেট জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ সিলেট শাখা। সিলেট বিভাগ ছাড়াও ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে উদ্যোক্তারা এতে বাহারি পিঠার পসরা সাজিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেলে সিলেট জেলা ক্রীড়া ভবন প্রাঙ্গণে নানা বর্ণের বেলুন উড়িয়ে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ও জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাট্যজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন।
উদ্বোধন পর্বে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ সিলেট শাখার আহ্বায়ক আল আজাদ। সবাইকে স্বাগত জানান সদস্য সচিব রজত কান্তি গুপ্ত।
উদ্বোধন মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম, সিলেট শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক শামসুল আলম সেলিম, একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাশ, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এ জেড রওশন জেবীন রুবা, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিটন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উজ্জ্বল দাশ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা দাশ জুঁই ও ইনোভেটরের নির্বাহী সঞ্চালক প্রণবকান্তি দেব।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ সিলেট শাখার যুগ্ম-সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ বলেন, আমাদের লোকায়ত পিঠার প্রচলন ফিরিয়ে আনতে এবং নতুন প্রজন্মকে এর সঙ্গে সংযুক্ত করতেই জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ ১৬ বছর ধরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে পিঠা উৎসবের আয়োজন করছে। এর মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। তবে নারীদেরকেই বেশি সম্পৃক্ত করতে চাই। কারণ নারীর ক্ষমতায়নই শুধু নয়, আমরা নারীর শিল্পক্ষমতা, শিল্পায়ন, বাজারজাতকরণের ক্ষমতা ও পিঠার সঙ্গে নাড়ির সম্পর্ককে গুরুত্ব দেই, স্বীকৃতি দেই। আবহমান সংস্কৃতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে চাই। এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাংগঠনিক উদ্যোগে পিঠা মেলা ও পিঠা উৎসব হয়, যা আমাদেরকে প্রাণিত করে।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে সরকারের এক ধরনের উদাসীনতার কথা উল্লেখ করে তিন বলেন, সংস্কৃতিকে বাদ রেখে উন্নয়ন ভাবনা কখনও সমাজের জন্য, দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না।
ম হামিদ এসময় খেলার মাঠ ও সংস্কৃতিচর্চার মঞ্চ তৈরির দাবি জানান। তিনি পিঠা উৎসব আয়োজনে সহযোগিতার জন্যে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, নতুন প্রজন্মকে ফাস্টফুড থেকে বাঙালির ঐহিত্যে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পিঠা উৎসব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধরে রাখার এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে আল আজাদ ঘোষণা করেন, সবার সহযোগিতায় আগামী শীতে আরও বড় পরিসরে সিলেট বিভাগীয় পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হবে।
উদ্বোধনের পর থেকে দিনের আয়োজনের সমাপ্তি পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে সমবেত সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি পরিবেশন করে ছন্দনৃত্যালয়, সংগীত নিকেতন, সুরের ভূবন, গীতবিতান বাংলাদেশ, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ সিলেট, একাডেমি ফর মনিপুরি আর্ট অ্যান্ড কালচার। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, একক সংগীত পরিবেশন করেন বরেণ্য লোকসংগীতশিল্পী একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন সুষমা দাশ, বাউল সূর্যলাল, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, হিমাংশু বিশ্বাস, তন্বী দেব প্রমুখ।
পিঠা উৎসব আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। পাশাপাশি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।