বিশ্বজয়ী আর্জেন্টাইন দিয়েগো ম্যারাডোনা কেবল নিজের দেশকেই গর্বিত করেননি। তিনি ক্লাব ফুটবলেও দলকে নিয়ে গেছেন সেরার কাতারে। ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির জার্সিতে তিনি ৮ বছর (১৯৮৪-১৯৯১) খেলেছেন। ওই সময়ের মধ্যে নাপোলিকে দুটি লিগ শিরোপা এবং একটি উয়েফা কাপও জেতান ম্যারাডোনা। মৃত্যুর পর বিশ্বজয়ী এই কিংবদন্তির নামে ক্লাবটি নাপোলি স্টেডিয়ামের নামকরণ করেছিল। সেটির সামনে বসানো হয় ম্যারাডোনার আবক্ষ মূর্তি। সেই মূর্তি সরিয়ে ফেলছে নগর কর্তৃপক্ষ।
ইতালির সংবাদ সংস্থা এএনএসএ জানিয়েছে, মূর্তিটি এর নির্মাতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাপোলিতে ম্যারাডোনার আরও কয়েকটি মূর্তি আছে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে নেপলসবাসীর হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। তবে, ব্রোঞ্জের তৈরি মূর্তিটির মূল্য বিচার করে এটি জনসমক্ষে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্মাতা ডমেনিকো সেপেকে মূর্তিটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
তারা আরও বলছে, ‘মূর্তিটি বানাতে শুধু কাঁচামাল বাবদই প্রায় ৩০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৪ লাখ টাকা) খরচ হয়েছে বলে জানানো হয়। এর বাইরে অন্যান্য খরচ তো আছেই।’
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ওলে জানিয়েছে, মূর্তিটি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতালির সংবাদমাধ্যম মাত্তিনো থেকে জেনেছেন নির্মাতা ডমেনিকো সেপে। তিনি মূর্তিটি ফেরত নিতে অনিচ্ছুক। যখন এটি সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল, শহরের মেয়র ছাড়াও ম্যারাডোনার সঙ্গে নাপোলিতে খেলা লিগজয়ী কয়েকজন সাবেক খেলোয়াড়ও উপস্থিত ছিলেন। মূর্তিটি যখন স্থাপন করা হয়েছিল, তখন কেউ এর দাম নিয়ে কথা বলেননি। এটি তৈরিতে সত্যিই ৩০ হাজার ইউরো খরচ হয়েছে কি-না, তা জানতে নেপলস শহরের কর্তৃপক্ষের দুই বছর লেগে গেল। অথচ ডমেনিকো সেপে নিজেই এই অঙ্কটা বলেছিলেন।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, মূর্তিটি এরই মধ্যে নাপোলির স্টেডিয়ামের সামনে থেকে সরিয়ে ডমেনিকো সেপের স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেপে মূর্তিটি ফিরিয়ে দিতে চান, কিন্তু অনুমতি পাননি।
অন্যদিকে, নেপলসের কর্তৃপক্ষ মনে করছে মূর্তিটি নাপোলির স্টেডিয়ামের সামনে স্থাপন করায় এর শিল্পী দ্রুতই বিখ্যাত হয়ে গেছেন এবং সেটি শুধুই ম্যারাডোনার জন্য। তাই এটি নির্মাতাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত বলেই মনে করেছে কর্তৃপক্ষ। ডমেনিকো সেপে স্বাভাবিকভাবেই এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি। তিনি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বলে ওলে’র খবরে বলা হয়েছে।
এর আগে, প্রকৃত খরচ চেয়েও বেশি দাবি করে মূর্তিটি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব তুলেন নেপলসের মেয়র গায়েতানো মানফ্রেদি। সেই প্রস্তাবে গত সপ্তাহে স্পোর্টস কাউন্সিলর এমানুয়েলা ফেরান্তে সই করলেও বিষয়টি সবাইকে জানানো হয় কয়েকদিন আগে। নেপলসের সিভিল কোড অনুযায়ী, কোনো কিছু দান করা হলে সেটির মূল্য অবশ্যই যিনি দান করলেন, তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সিটি কাউন্সিল তদন্ত করে জানতে পেরেছে, ডমেনিকো সেপের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়।
২০২১ সালে নাপোলি শহরের মেয়র গায়েতানো মানফ্রেদি ও ক্লাবটির চেয়ারম্যান অঁরেলিও দি লরেন্তিসের উপস্থিতিতে দিয়েগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামের সামনে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল। মূর্তিটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের কথা শুনে সেটি কিনতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে নাপোলির পার্শ্ববর্তী শহর কাসালনুয়োভোর কাউন্সিল।