স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় মৃত্যুঝুঁকি জেনেও দালালদের লোভনীয় প্রস্তাব মেনে স্বপ্নের ইউরোপে যাওয়ার জন্য আফ্রিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মো. রিপন মিয়া (৩৯)। তিনি আফ্রিকা থেকে আলজেরিয়া হয়ে অবশেষে স্বপ্নের ইউরোপে পাড়ি দিয়েছেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে!
মৃত মো. রিপন মিয়া হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাবু মিয়ার পুত্র। এক সন্তানের জনক রিপন মিয়া দেশে অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীসহ বাবা, মা, আত্মীয়-স্বজন রেখে ইউরোপের উদ্দেশে আফ্রিকায় পাড়ি জমান। গত ৩১ অক্টোবর দালালদের মাধ্যমে আলজেরিয়ার ওরান থেকে রাতের বেলা স্পিডবোটযোগে অন্যান্য দেশের আরও ১৮ জনসহ রিপন মিয়া রওনা হন স্পেনের উদ্দেশে।
উত্তাল ভূমধ্যসাগরে ৬ ঘণ্টার যাত্রা শেষে যখন স্পেনের উপকূল দৃষ্টিসীমায় আসে, তখন নৌকা থেকে তারা লাফিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক পানিতে ডুবে মারা যান মো. রিপন মিয়াসহ মরক্কোর এক নাগরিক। নৌকা থেকে নেমে তিনজন বাংলাদেশিসহ ১৬ জন স্পেনের আলমেরিয়ায় পৌঁছেন।
রিপন মিয়ার হয়তো স্বপ্ন ছিল ইউরোপে পৌঁছে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো একদিন দেশে ফিরবেন। কিন্তু তার এই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। রিপন মিয়া ফিরবেন দেশে। তবে জীবিত নয়, কফিনবন্দি হয়ে।
স্পেনের এনজিও সিআইপিআইএমডি’র পক্ষ থেকে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) আলমেরিয়ায় গিয়ে মো. রিপন মিয়ার মৃতদেহ শনাক্ত করেন। রিপন মিয়ার পরিবারের অনুরোধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রিপন মিয়ার মরদেহ অবশেষে ফিরছে বাংলাদেশের মাটিতে, ফিরছে নিজের স্ত্রী, সন্তান আর বাবা-মায়ের কাছে। আগামী ৫ জানুয়ারি দুপুরে টার্কিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে তার মরদেহ পৌঁছাবে বাংলাদেশে।
স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মূতাসিমুল ইসলাম জানান, সাগরপথে লিবিয়া, আলজেরিয়া থেকে ইউরোপে এ ধরনের দুর্গম পথে যাত্রা অত্যন্ত বিপদসংকুল। দালালের প্ররোচনায় এই ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথে পা না বাড়ানোর জন্য তিনি প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
মো. রিপন মিয়ার করুণ পরিণতি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, নিজ পরিবার, সন্তান, বাবা-মায়ের ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে দূর প্রবাসে এমন মৃত্যু যেন আর কারও না হয়। এ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা উচিত।