জৈন্তাপুরে ক্রিকেট খেলার জের ধরে কানাইঘাটের চতুল বাজারে জনসম্মুখে ঘটা স্কুলছাত্র মাসুম আলম হত্যা মামলার আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসাথে তাদের সবাইকে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেয়া হয়।
এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামিদের সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সবাইকে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেন।
সোমবার (০২ জানুয়ারি) এই হত্যা মামলার সকল আসামি সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত শুনানি শেষে তাদের জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু এবং কানাইঘাট থানার অফিসার (ইনচার্জ) তাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পরিবার ও এলাকাবাসী জেল হাজতে আটক খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর-২০২২ ইং বিকেল ৫টার দিকে গ্রামের ক্রিকেট খেলার মত তুচ্ছ ঘটনায় জৈন্তাপুর-কানাইঘাট সীমান্তবর্তী চতুল বাজারে দিনের বেলায় জনসম্মুখে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় ছাতারখাই উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র স্কুল ছাত্র মাসুম আলম (১৯)কে।
আগের দিন শুক্রবার বিকেলে জৈন্তাপুর উপজেলার ছাতারখাই গ্রামের কতিপয় যুবকের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির পর শনিবার (০৫ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ভিকটিম মাসুম আহমদ ও তার পিতা আব্দুল খালিক কানাইঘাট উপজেলার চতুল বাজারে আসেন।
বিকাল ৫টার দিকে মাছুম আহমদ চতুল বাজারের পশ্চিম পাশে একটি পান-সুপারির দোকানে গেলে সেসহ তার পিতা আব্দুল খালিকের উপর আগের দিনের ক্রিকেট খেলার মাঠের বিরোধের জের ধরে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বাবুল আহমদ, তার ভাই নিজাম উদ্দিন, তফজ্জুল আলী, রাসেল আহমদ, কামরুল ইসলাম সহ ২০/২৫ জন।
আব্দুল খালিক দৌড় দিয়ে একটি দোকানে ব্যবসায়ীদের সহায়তায় আশ্রয় নিলেও তার ছেলে মাছুম আহমদকে রাস্তার উপর উপর্যুপরি দেশীয় ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠি-সোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বাজারের লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাছুম আহমদকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সে পথিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
এ ঘটনায় মাসুম আলমের পিতা আব্দুল খালিক কানাইঘাট থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪।
মামলার আসামিরা হলো- ছাতারখাই গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তফজ্জুল আলী, বাবুল আহমদের ছেলে রাসেল আহমদ, মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে কবির উদ্দিন, নিজাম উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম, মৃত কুতুব আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন ও বাবুল আহমদ, আব্দুল জলিলের ছেলে আলমাছ উদ্দিন, আব্দুল মনাইয়ের ছেলে নজরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান’র ছেলে ইমরান আহমদ, আব্দুস সুবহানের ছেলে আলীম উদ্দিন, আব্দুল মনাফের ছেলে মনজুর আহমদ, তফজ্জুল আলীর ছেলে জবরুল, সফর আলীর ছেলে বশির উদ্দিন, লাল মোহন, আব্দুল ওয়াহিদের ছেলে শাহজাহান মিয়া, ভিতরগ্রামের মফিজ আলীর পুত্র মঈন উদ্দিন।
গ্রামে একক আদিপত্য বিস্তার করতে আওয়ামী লীগ নেতা তফজ্জুল আলীর নেতৃত্বে তুচ্ছ এই ঘটনায় পূর্ব পরিকল্পনা মতে পরিকল্পিতভাবে মাসুম আলম-কে খুন করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে ঘটনার পর চতুল বাজারে মানববন্ধন করে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি।
জানা গেছে, মাসুমের বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার ছাতাইরখাই গ্রামে। আসামি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তফজ্জুল আলীসহ সবার বাড়ি একই গ্রামে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে পার্শ্ববর্তী কানাইঘাট উপজেলার চতুল বাজারের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। ফলে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে কানাইঘাট থানায়।
খুন হওয়া মাসুম আলম স্থানীয় আমিনা-হেলালী টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। পড়ালেখার পাশাপাশি সে নিজের পরিবারের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতো।
এদিকে ঘটনার পর আসামিরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন। তাদের আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সোমবার তারা সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যান। আদালত আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সবাইকে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেন।