দীর্ঘদিন থেকে মৌরসী সম্পত্তি রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ মণিপুরীপাড়ার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ মণিপুরি মহিলা সমিতির সভানেত্রী এস. রীনা দেবী। পঁচাত্তর বছর বয়সেও তাকে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে সন্ত্রাসীদের হামলা ও হুমকি। এ অবস্থায় আবারও তিনি সরকারের কাছে তার মৌরসী সম্পত্তি রক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেট নগরীর শিবগঞ্জে আমার মৌরসী সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে স্বত্ত্ব মামলা চলছে। এ নিয়ে অতীতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। বর্তমানে আবারও সন্ত্রাসী হামলা চলছে। স্বত্ত্ব মামলার ১০ নম্বর বিবাদী বালাগঞ্জের খাঁপুর গ্রামের মনোহর আলী তেরা মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজ মাসুকের পক্ষে গত ১১ জুন এজাজ নামের একজন লোক নগরীর উপশহর ডি ব্লকের ২৯ নম্বর সড়কের ১/এ নম্বর বাসার অধিবাসী পরিচয় দিয়ে আপসের প্রস্তাব দেন। আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষার কথা বলি। ২০ জুলাই ও ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি আপস না করলে বড় ধরনের ক্ষতির হুমকি দেন। এ ব্যাপারে ২ অক্টোবর শাহপরাণ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। ২৭ অক্টোবর এজাজ আবারও হুমকি দেন। ১ নভেম্বর স্কুল ছুটির পর আমার ছেলে অভিরূপ তিন নাতিকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে টিলাগড় কল্যাণপুরের মাদক ব্যবসায়ী ‘কবির ডাকাত’ তার ওপর হামলা করে। সম্পত্তি ফেলে ভারতে জান নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে গত ৩ নভেম্বর শাহপরাণ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে (নম্বর ১৪৯)। গত ৯ ডিসেম্বর সকালে ৭/৮ জনের একদল সন্ত্রাসী ট্রাক নিয়ে এসে আমাদের ভূমিতে বালু ফেলতে থাকলে আমরা থানায় কল দেই। পুলিশ আসার খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় আবারও ‘মাসুকের লোক’ পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে যায়। এ ব্যাপারেও গত ৯ ডিসেম্বর শাহপরাণ থানায় আরেকটি জিডি দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর সকালে এজাজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী মুহিব, জুয়েল, মুর্শেদ, ইসতাক, বিশুসহ আরও কয়েকজন বাসায় হামলা করে। তারা ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে লুটপাট ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বাসা ভাঙচুর করে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে এবং দেড় লক্ষ টাকার মালামাল লুট করেছে। এ ঘটনায় গত ২৫ ডিসেম্বর শাহপরাণ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নম্বর ১৯)।
রীনা বলেন, আমার সম্পত্তি নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে বিরোধ চলছে। ওই বছর টিলাগড়ের জনৈক মানিক মিয়া দলবল নিয়ে পাকাকরণের কাজ শুরু করলে কোতোয়ালী পুলিশের বাধার মুখে তারা ফিরে যান। তখন বলা হয়েছিল, ভূমিখেকো চক্রের সদস্য টিলাগড়ের আব্দুছ ছালামের সাথে আমার স্বামী বিনিময় দলিলের মাধ্যমে এই জমির স্বত্ত্ব ত্যাগ করেছেন। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
তিনি বলেন, আমরা ২০১০ সাল থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও মিটার শূন্য দেখায়। আমরা বিল দেই না। পানির জন্য সিটি করপোরেশনের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও তারা পানির সংযোগ দেয় না। এর নেপথ্যে রয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এ অবস্থায় সন্ত্রাসীদের হামলা আর হুমকি-ধমকিতে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। এর আগে আমার বড় ছেলে অয়ন সিংহের বিয়ের দিনে শতাধিক সন্ত্রাসী বাড়িতে হামলা করেছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ৮ মাসের বেশি সময় আমাদের সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দিয়েছিলেন।
সর্বোচ্চ আদালতে স্বত্ত্ব মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পুলিশ প্রশাসন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের কাছে নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রীনার বড় ছেলে অয়ন সিংহ। উপস্থিত ছিলেন দুই ছেলের স্ত্রী জলি ও রাহী মনি সিনহা।