সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবার বিদেশি কোনো অতিথিকেও আমন্ত্রণ জানাবে না আওয়ামী লীগ।
এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন ও মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ পর্যায়ে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন।
দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাকি দুটোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে। তবে অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থার মধ্যে এবার দলের জাতীয় সম্মেলনে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। এ জন্য সাজসজ্জা ও অন্যান্য আয়োজন অনেকটাই সাদামাটা হবে। এবার বিদেশি কোনো অতিথিকেও আমন্ত্রণ জানাবে না আওয়ামী লীগ। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রণ পাবেন। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। সে কারণে এবার সে বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, এবারের স্লোগান ঠিক করে দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’ ঠিক করা হয়েছে।
এরই মধ্যে সম্মেলন সফল করতে দলের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে অভ্যর্থনা উপকমিটি একাধিক বৈঠক করেছে এবং প্রতিদিনই সকাল-বিকাল নানা বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এতে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর বাইরে রাজনীতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং বিদেশি কূটনীতিকদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আমন্ত্রিতদের সমপরিমাণ উৎসুক নেতা-কর্মীও কাউন্সিলে আসবেন।
অভ্যর্থনা উপ-কমিটির সদস্যসচিব ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির সঙ্গে। তিনি বলেন, দূতাবাসের কূটনীতিক ছাড়া বিদেশ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইতিমধ্যে দাওয়াতপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বিবেচনা করে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে চাকচিক্য বাদ দিতে বলেছেন। ফলে আলোকসজ্জা, বাহুল্য থাকবে না।
প্রসঙ্গত, গত (২১তম) জাতীয় সম্মেলনেও বিদেশি অতিথিদের দাওয়াত দেয়নি আওয়ামী লীগ। ২০২০ ও ২০২১ সালে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে এক বছর ধরে বিদেশি অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া হবে এই বিবেচনায় তখন জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ২০১৬ সালে ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি দেশের প্রায় ৫৫ জন অতিথি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এবার বড় দিনের কারণে দূতাবাসের কূটনীতিকদের অধিকাংশ ছুটিতে থাকবেন। ফলে তাদের অংশগ্রহণও কমে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে।
২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে এবার ২২তম জাতীয় সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি। এবারের সম্মেলনে আলোকসজ্জা একেবারেই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। থাকবে আগের মতো বিশাল তোরণও। সাদামাটা কিছু তোরণ হতে পারে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে মঞ্চটিতে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, সেখানেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। তবে এই মঞ্চে নৌকার আদল দেওয়া হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন লাগানো হবে।
২০১৯ সালে সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছে গাছে মরিচবাতি লাগানো হয়েছিল। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে টানানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। গতবার মূল মঞ্চ তৈরি হয়েছিল পদ্মা সেতুর আদলে। যা ছিল ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত।