বিখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক ডেভিড ফ্রস্টের ওই কথাটা লিওনেল স্কালোনির সঙ্গে বেশ মিলে যায়, ‘সাফল্য চাইলে সাফল্যকে লক্ষ্য বানিও না, যা করতে ভালোবাস, সেটাই করতে থাক। সাফল্য নিজেই ধরা দেবে।’
যিনি জাতীয় দলের একাদশেই নিয়মিত সুযোগ পেতেন না, সেই স্কালোনি এখন আর্জেন্টিনা ফুটবলের স্বপ্নদ্রষ্টা। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের পর আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব ওঠে তাঁর কাঁধে। স্কালোনিকে অনেকেই তখন ভালো চোখে দেখেনি। সবকিছু একপাশে রেখে ‘ভালোবাসার’ কাজটিই যেন করে গেলেন স্কালোনি। সাফল্য ধরা দিতেও বেশি সময় লাগেনি তাঁর।
ভঙ্গুর একটা দলকে গুছিয়ে ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছেন বড় কোনো শিরোপা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে গত বছর কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতে আলবিসেলেস্তেরা। এ বছর ইউরোপসেরা ইতালিকে হারিয়ে জিতেছেন ফিনালিসিমার ট্রফি।
আজ স্কালোনির সামনে অনবদ্য এক গল্প লেখার দিন। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর দল আর্জেন্টিনা খেলবে ফুটবল পরাশক্তি ফ্রান্সের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপের শুরুটা খুবই কঠিন হয়েছিল স্কালোনির। ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা দলটি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে যায়। এই হার স্কালোনিকে হতাশা নয় বরং ফাইনালে ওঠার শক্তিই যেন জুগিয়েছে। এর পর লুই ফন গাল ও জ্লতকো দালিচের মতো বিশ্বসেরা কোচরা তাঁর কৌশলের কাছে হার মেনেছেন। স্কালোনির কৌশল দেখে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে কৌশলী আর সেরা কোচ স্কালোনি। বিশ্বকাপে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ফরমেশনে তিনি আর্জেন্টিনাকে খেলিয়েছেন।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমে খবর, ফাইনালের ফরমেশন নিয়ে দ্বিধায় আছেন স্কালোনি। ফরাসিদের আটকাতে স্কালোনি অনুশীলনে ৫-৩-২ ও ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলিয়েছেন শিষ্যদের। ফ্রান্সের রক্ষণ ভাঙতে লিওনেল মেসি ও হুলিয়ান আলভারেজ তো আছেনই। এই দুই ছকের মধ্যে একটি বেছে নিতে পারেন তিনি।
দেশম-স্কালোনির মস্তিষ্কের লড়াই
স্কালোনির কৌশলকে ট্যাকেল দিতে ফ্রান্সের আছেন দিদিয়ের দেশমের মতো ‘চাণক্য’, যিনি টানা ১০ বছর দলটির দায়িত্বে। তাঁর অধীনে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন ফরাসিরা। দেশমের সামনে সুযোগ আছে কোচ হিসেবে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের। এরই মধ্যে অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ এবং কোচ হিসেবে ২০১৮ বিশ্বকাপ জিতে রেকর্ড গড়েছেন দেশম।
এই রেকর্ড শুধু জার্মানির বেকেনবাওয়ারেরই আছে। বেকেনবাওয়াকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে দেশমের সামনে। কাতার বিশ্বকাপ জিতলেই কোচ হিসেবে দুবার বিশ্বকাপ জিতবেন তিনি। ভাগ বসাবেন ইতালির ফুটবল ইতিহাসের সেরা কোচ ভিট্টোরিও পোজ্জোর টানা দুবার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডে। তাঁর অধীনে ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপ জিতেছিল আজ্জুরিরা।
দেশম এই বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে পাঁচ ম্যাচেই ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলিয়েছেন। আজ কম্বিনেশন ভাঙার সম্ভাবনা কম। তাঁর দলে পাঁচ ফুটবলার আবার ক্যামেল ফ্লুয়ে আক্রান্ত। ডিফেন্ডার কোনাতে ও উপামেকানো যদি ফিট না থাকেন, মেসির কাছে পরীক্ষা দিতে হতে পারে দেশমের ফ্রান্সকে।