প্রতিনিয়ত গাছ কেটে বন উজাড় করা হচ্ছে। ফলে বনের পশু-পাখিরা খাবার ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বন উজাড়ের ফলে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। যার শিকার হচ্ছে বন্যপ্রাণী বানরও। এমন বাস্তবতায় বিধায় বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে প্রাণে বাঁচতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে লোকালয়ে বানরের প্রভাবে শংঙ্কায় আছেন কৃষক সহ সাধারণ মানুষজন। অথচ নিরব ভূমিকায় রয়েছে বন প্রশাসন।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার জেলা শহরের অদূরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ধানের ক্ষেত, বসতবাড়ির ছাদে, ফসলের মাঠে প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে বানর। মাঠের ধান, গাছের ফল খেয়ে দিন পার করছে বানরেরা।
তবে প্রতিনিয়তই লোকালয়ে এমন অভুক্ত বানর দেখা গেলেও তাদের উদ্ধার বা পুনরায় বনাঞ্চলে ফিরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোন উদ্যোগ নজরে আসেনি বলে জানান এলাকাবাসী।
কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার মানিক মিয়া, উত্তম গোয়ালা, দিলীপ করসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, ধান ক্ষেত বাঁচাতে সারাদিন পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। বানরের উপদ্রব বাড়ায় অনেকেই কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। বানররা দল বেধে ধান খেতে আসে। একেকটা দলে অর্ধ শতাধিক বানর থাকে।
কৃষকরা আরোও বলেন, আমরা সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চলে আসি ধান ক্ষেত পাহারা দিতে। প্রতিদিন এসেই বানরের সাথে যুদ্ধে নামতে হয় সেই যুদ্ধ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাত্রে তারা ধান খেতে আসে না। আগে এতো বানরের উপদ্রব ছিল না। এখন দিন দিন বেড়েই চলছে। বানরদেরকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দিতেই দিন পার হয়ে যায়।
কুলাউড়ার হিংগাজিয়ার কৃষকরা শংঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখানে প্রায় ৫০ একর জায়গায় ধানের চাষ করা হয়। এভাবেই যদি আরও বানরের আক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে ধান চাষ করা সম্ভব হবে না। অনেকেই বানরের উপদ্রবের কারনে ধান ক্ষেত ছেড়ে দিয়েছেন।
গৃহীনি কৌশিল্লা রানি জানান, আমার ঘরের চালের উপর লাগানো শিম। বানরের কয়েবার হানায় শিমগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও কয়েকদিন পর পর পেপে, পেয়ারা, জাম্বুরা নিয়ে যাচ্ছে বানর।
পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক রিপন দে বলেন, মানুষ বানরের ভূমি দখল করে আছে, তাহলে বানররা যাবে কোথায়? তাদেরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই তারা খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে। বানরেরা লোকালয়ে থাকলে তাকে তাড়াতে গিয়ে অনেক সময় লোকজন মারধর করে। এ বিষয়ে বন বিভাগের কড়া নজরদারি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এইবার বানরের উপদ্রব অনেক জায়গায় একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। ধারণা করছি কুলাউড়ায় আগে থেকে বনের মান কমে যাবার কারণে তাদের খাবারের অভাব দেখা দিচ্ছে বলে এমনটা হচ্ছে। এছাড়া এবারের বন্যার কারনে অনান্য জায়গা থেকে বানর আসতে পারে। আমি নিজে অথবা আমার একটি টিমকে খুব দ্রুত পর্যবেক্ষণে পাঠাবো।