হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে প্রায় দেড় বছর পর ফাঁদ পেতে প্রেমিক জুটিকে আটক করেছে র্যাব ও পুলিশ। মেয়ের বাবার করা অপহরণ মামলায় সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে জামালপুর জেলার নন্দীবাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে আটক হওয়ার পর প্রেমিক-প্রেমিকা দাবি করেছেন এটি অপহরণের ঘটনা নয়। তারা দুজন পালিয়ে গিয়ে উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে করেছেন এবং গত প্রায় দেড় বছর যাবত সংসার করছেন।
জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের শেখ জিয়া উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ও একই গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ আবদাল মিয়ার ১৪ বছরের মেয়ে খাগাউড়া আব্দুল ওয়াহিদ উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী রেশমা বেগমের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কের সুবাদে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেমিক যুগল বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মেয়ের পিতা শেখ আবদাল মিয়া বাদী হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ৬ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
মামলা দায়েরের পর মেয়েকে উদ্ধার ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। মামলার মূল আসামি আব্দুর রাজ্জাক ব্যাতিত অন্য আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। ৬ মাস আসামিরা কারাগারে থাকার পর মহামান্য হাইকোর্টের দেয়া জামিনে বেরিয়ে আসেন।
পুলিশ ও র্যাব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় দেড় বছর ধরে ছেলে ও মেয়ের সন্ধানে একাধিকবার অভিযান চালায়। অবশেষে ঘটনার দেড় বছর পর গত সোমবার দিবাগত রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিকুর রহমান র্যাব-১৪ এর সহায়তায় জামালপুর জেলার শেরপুরের নন্দীবাজার এলাকার জনৈক জামাল শেখের ভাড়া বাসা থেকে অপহরণ মামলার প্রধান আসামি আব্দুর রাজ্জাক ও তার প্রেমিকা রেশমা বেগমকে আটক করে নবীগঞ্জ থানায় নিয়ে যান। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) তাদেরকে হবিগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপহরণ মামলার প্রধান আসামি আব্দুর রাজ্জাক জানান, রেশমা বেগম তার বিবাহিত স্ত্রী। তিনি রেশমাকে অপহরণ করেননি। তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছেন।
রেশমা বেগম জানান, তার বাবা যে মামলাটি করেছেন তা সঠিক নয়। তারা একে অন্যকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছেন। এটা অপহরণের ঘটনা নয় এবং এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত নয়। তার বাবা নিজের চাচাতো ভাইদের ফাঁসানোর জন্য উক্ত মামলায় ৬ জনকে আসামি করেছেন। তারা ভালোবেসে ঢাকার সাভারে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে দেড় বছর আগে বিয়ে করে জামালপুর জেলার শেরপুর এলাকায় ধর্মীয় পিতা ও বিয়ের উকিল জামাল শেখের আশ্রয়ে ছিলেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডালিম আহমদ বলেন, ছেলে ও মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অপহরণ মামলাটি সাজানো মনে হচ্ছে। ভিকটিম ও আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।