শ্বাসরুদ্ধকর ফলাফল শূন্য ম্যাচের শেষে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিলো জাপান। একইসাথে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে মড্রিচের ক্রোয়েশিয়া।
এবারের বিশ্বকাপে জাপান রীতিমতো জায়ান্ট কিলার রূপেই দেখা দিয়েছিল। জার্মানিকে হারিয়ে শুরু, এরপর স্পেনকে হারিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে রীতিমতো গ্রুপের সেরা হয়েই নকআউটে এসেছিল নীল সামুরাইরা। ক্রোয়েশিয়াকেও দারুণ চোখরাঙানিই দিচ্ছিল হাজিমে মরিয়াসুর দল, এগিয়ে গিয়েছিল শুরুতেই।
তবে এরপরই ক্রোয়াটরা ফিরল ম্যাচে। খেলাটা গেল টাইব্রেকারে, কাতার বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো; সেখানেই থামল জাপানি উৎসব। ৪-১ গোলে শেষ হাসি হাসল শেষ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা। জাপানের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে নিশ্চিত করে ফেলল প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনাল।
বড় প্রতিপক্ষ সামনে পেলেই জাপান জ্বলে ওঠে, গ্রুপ পর্বে জার্মানি আর স্পেন সেটা টের পেয়েছে ভালোভাবেই। সেটা আজও দেখা গেল। শুরুতে অবশ্য ক্রোয়েশিয়াই নিয়ন্ত্রণ করছিল ম্যাচটা, তবে সময় গড়াতেই জাপান চলে আসে দৃশ্যপটে। পেয়ে যায় গোলের দেখাও। রিতসু দোয়ানের বাড়ানো ক্রসে মায়া ইয়োশিদা মাথা ছুঁয়ে গিয়ে পড়ে দাইজেন মায়েদার কাছে, জাপানকে এগিয়ে দিতে ভুল করেননি সেল্টিকের এই স্ট্রাইকার।
গোলটা করেই যেন ভুলটাও করে বসল জাপান। হ্যাঁ, ভুলই। নিজেদের শেষ সাত ম্যাচে শুরুতে গোল করে ৪ ম্যাচে হেরেছে নীল সামুরাইরা। বিশ্বকাপের নকআউটে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচ জেতার রেসিপি ক্রোয়াটদেরও অজানা নয়। গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচটা বের করে নিয়েছিল দলটি!
বের করে নিল আজও। গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন যিনি, সেই ইভান পেরিসিচ এগিয়ে এলেন আজও। তার গোলেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতায় ফেরেন লুকা মড্রিচরা।
এরপর জয়সূচক গোলের চেষ্টা চালিয়েছে দুই দল। তবে আলোর মুখ দেখেনি তার কোনোটিই। ফলে খেলাটা গড়ায় যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে, কাতার বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো। সেখানেও দেখা মিলেছে একই দৃশ্যের। মুহুর্মুহু আক্রমণ গিয়ে মাথাকুটে মরেছে দুই দলের বিপদসীমায়। অবধারিতভাবেই খেলাটা গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে।
পুরো ম্যাচে দাঁতে দাঁত চেপে জাপানকে রুখে দেওয়া ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ টাইব্রেকারেও দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন যেন। তাকুমি মিনামিনোর পেনাল্টি ঠেকিয়ে শুরুটা করেন তিনি। এরপর কাওরো মিতোমার চেষ্টাও রুখে দেন। ওপাশে নিকোলা ভ্লাসিচ আর মার্সেলো ব্রজভিচ গোল করে ক্রোয়াটদের এগিয়ে দিয়েছিলেন ২-০ গোলে।
এই অবস্থা থেকে জাপানকে জিততে হলে অভাবনীয় কিছুই করে বসতে হতো। তাকুমা আসানো গোল করে নিজের কাজটা করে রেখেছিলেন, ওপাশে মারকো লিভাজা পেনাল্টিতে ব্যর্থ যখন হলেন, জাপান সেই অভাবনীয় কিছুর আশাই করে বসেছিল।
তবে সে আশাটা মিলিয়ে যেতেও সময় নিল না তেমন। চতুর্থ শট নিতে আসা মায়া ইয়োশিদার পেনাল্টি ঠেকান লিভাকোভিচ। ওপাশে মারিও পাসালিচ গোলটা পেতেই ক্রোয়েশিয়া চলে যায় শেষ আটে, টানা দ্বিতীয় বারের মতো। আর জাপান টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এগিয়ে গিয়েও জিততে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নিল দলটি। গেল বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়েও ৩-২ গোলে হারের গ্লানি নিয়ে বিদায় নিয়েছিল। তবে এবারের আফসোসটা হয়তো বেশিই হবে কোচ মরিয়াসুর, ম্যাচটা জেতা থেকে যে মাত্র তিনটা পেনাল্টির দূরত্বে ছিল তার দল!