৩০০ কোটি টাকার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাগলা-হবিগঞ্জের সৈয়দপুর সড়ক সাড়ে তিন কিলোমিটার সরু অংশের জন্য আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজে আসছে না। আন্তঃজেলা বাসসহ বড় বড় কার্গো পরিবহন ও ট্রাক চলাচল করছে না এই সড়ক দিয়ে। এ অবস্থায় সুনামগঞ্জবাসীর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যোগাযোগ পথ কমিয়ে আনার কাঙ্ক্ষিত পাগলা-জগন্নাথপুর-সৈয়দপুর সড়কটির হবিগঞ্জ অংশের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি স্থানীয়দের।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলরা জানান, ৪৬ কিলোমিটার পাগলা-জগন্নাথপুর-সৈয়দপুর সড়কে বিভাগের দীর্ঘ রানীগঞ্জ সেতুসহ ৩৬ কিলোমিটার অংশ সুনামগঞ্জ জেলার সীমানায় এবং বাকি ১০ কিলোমিটার অংশ হবিগঞ্জ জেলার সীমানায় পড়েছে। গত ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানীগঞ্জ সেতু ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। এরপর এই সেতু ও সড়ক আন্তঃজেলা বাসসহ মালবাহী ট্রাক ও কার্গো চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দুইদিন এই সড়কে বড় যানবাহন চললেও সাড়ে ৩ কিলোমিটার সরু সড়ক ও দুটি বেইলি সেতুর কারণে এই পথ ব্যবহার করছেন না বড় যানবাহনের চালকরা।
সুনামগঞ্জ-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি এই সড়ক দিয়ে দুইদিন গিয়েছিলাম। সুনামগঞ্জের শেষ সীমানা এনায়েতগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে কোনো সমস্যা নেই। এর পরের কিছু অংশে কাজ চলছে, কিছু অংশে এখনও কাজ হয়নি। যেখানে কাজ হচ্ছে, সেই অংশ দিয়ে দিনে গাড়ি চলাচল করা কঠিন। আর যে অংশে কাজ হয়নি, সেখানে সড়কের প্রশস্ততা কম। সরু সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অসংখ্য ছোট গাড়ি দিনে চলাচল করায় ওই অংশ দিয়ে গাড়ি টানাই যায় না। সময় বেশি লাগে। এজন্য এই পথে আর যাইনি আমি।
পণ্য পরিবহনের একটি বড় ট্রান্সপোর্টের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, একদিন এই পথ দিয়ে ঢাকা থেকে এসেছিলাম। ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে কিছু পথ এসেই ২০ মিনিটের পথ ১ ঘণ্টায় এসেছি। সৈয়দপুর থেকে এনায়েতগঞ্জ পর্যন্ত পথে বড় যানবাহন চলতে সমস্যা হয়, পথ সরু। ছোট ছোট যানবাহনও সেখানকার সড়কে বেশি থাকে। এনায়েতগঞ্জ থেকে পাগলা পর্যন্ত সড়ক ভালো, কিন্তু জগন্নাথপুরের নারিকেলতলার পাশের কাটাখাল বেইলি সেতু ও ভমভমি বাজারের পাশের ভমভমি বেইলি সেতুতে এসে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
সুনামগঞ্জের মাইক্রোবাসচালক আব্দুল মোতালেব বলেন, গত সোমবার এই সড়ক দিয়ে ঢাকায় গেছি আমি। কোথাও তেমন কোনো সমস্যা নেই। এনায়েতগঞ্জ-বান্দেরবাজার অংশে কাজ চলছে। সামান্য কিছু অংশের কাজ এখনও বাকি। রানীগঞ্জ সেতু খুলে দেওয়ার আগেই এনায়েতগঞ্জ-সৈয়দপুর পর্যন্ত সড়কের কাজ শেষ করলে ভালো হতো।
সুনামগঞ্জের মাইক্রোবাসচালক রাজন পাল বলেন, এই সড়ক দিয়ে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। দেড় ঘণ্টা কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছা যায়। কিন্তু দুটি বেইলি সেতু যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ভমভমি বেইলি সেতু ভেঙে নতুন সেতু করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়, সিলেট থেকে দরপত্র হয়েছে। আশা করছি আগামী জানুয়ারি মাসে এই সেতুর কাজ শুরু হবে। কাটাখাল সেতুটি একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও সেটির অনুমোদন হয়নি। এনায়েতগঞ্জ থেকে সৈয়দপুর অংশ হবিগঞ্জ জেলার সীমানায়। সেখানেও কাজ চলছে।
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, এনায়েতগঞ্জ থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের সাড়ে ৩ কিলোমিটারের কাজ প্রায় শেষ। ওই অংশকে ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। বাকি সাড়ে ৩ কিলোমিটারেও কাজ শুরু হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া সিলেট বিভাগের একটি বড় সড়ক প্রকল্পে পাগলা-সৈয়দপুর সড়ক অন্তর্ভুক্ত আছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে এই সড়ক ৩৪ ফুট প্রশস্ত হবে। এই সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে যাবে।