ঢাকার আদালত থেকে পুলিশের চোখে পিপার স্প্রে ছিটিয়ে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কারাগারগুলোতেও নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
সিলেটের কারাগার কর্তৃপক্ষও বিশেষ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কারারক্ষীদের দায়িত্ব পালনেও আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। কারাবন্দিরা যাতে কোনো গোপন বৈঠক, শলাপরামর্শ করতে না পারে সেজন্যও বাড়তি নজর রাখা হয়েছে।
কারা অধিদফতর জঙ্গিদের থাকা, খাওয়া, চলাফেরায় নজরদারি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়িয়েছে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা জঙ্গিসহ ফাঁসির আসামিদের শিকল (ডাণ্ডাবেড়ি) পরিয়ে রাখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কারাগারে বসেই বাইরের জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট রয়েছে জঙ্গিরা। বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের জন্য বর্তমানে তারা ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির প্রতি ঝুঁকছে। এসব প্রযুক্তি অতি সহজে বহনযোগ্য ও কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কারাগারের ভেতরে নেওয়া যায়। ফলে জঙ্গিরা মেমোরি কার্ড, পেনড্রাইভ, ইউএসবি পোর্টসহ আধুনিক ও ক্ষুদ্রাকৃতির প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার করছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়াতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে এসব জঙ্গি। যেকারণে কারাগারে বন্দিদের জন্য দেওয়া খাদ্যদ্রব্য তদারকিতে আরও কঠোর নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, বর্তমানে কারাগারে ২ হাজার ৬৫০ জন বন্দি রয়েছে। এরমধ্যে জঙ্গিসহ ৯১ জন ফাঁসির আসামি রাখা হয়েছে নতুন এই কারাগারের কনডেম সেলে। বিভিন্ন জেলায় মামলার হাজিরা দেওয়ার জন্য জঙ্গিদের ৩ জনকে ইতোমধ্যে এই কারাগার থেকে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে। তবে অধিক নিরাপত্তায় এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে জঙ্গিদের আনা হয়ে থাকে। ঢাকার ঘটনার পর জঙ্গিদের হাজির করার ক্ষেত্রে অন্যত্র যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্পর্শকাতর মামলার আসামিদের বহনের ক্ষেত্রে সীমবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া খাবার সরবরাহসহ সব বিষয়ে তল্লাশি কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। কারাগারের নিরাপত্তায় কারারক্ষীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে বর্তমানে নতুন ও পুরাতন দু’টি কারাগার রয়েছে। ১৭৮৯ সালে আসামের কালেক্টর জন উইলিশ সিলেট কারাগার প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ কারাগারটি কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করে। এই কারাগারের মোট ২৪ দশমিক ৭৬ একর জায়গার মধ্যে কারাগারের ভেতরে আছে ১০ দশমিক ৫০ একর এবং কারাগারের বাইরে ১৪ দশমিক ২৬ একর। এর মধ্যে দুই দফায় ১২১ শতাংশ জমি সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক দখলকৃত ছিল।
২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক সিলেট পুরাতন কারাগারকে ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে এই কারাগারে ২৭ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে। এসব বন্দির নিরাপত্তা ও কারাগারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৪৭ জন কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন।
এদিকে, ২২৯ বছরের পুরাতন কারাগারে বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২ হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ভবিষ্যতে আরও ২ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ রেখে সিলেট বাদাঘাটে নির্মিত হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কারাগারের শুভ উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি এই কারাগারে বন্দি স্থানান্তর করা হয়।
কারা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ দশমিক ৩৬ একর ভূমিতে নির্মিত এই কারগারে সীমানা প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৭২৯ আরএফটি। সীমানা প্রাচীরের উচ্চতা সমতল ভূমি থেকে থেকে ৫ ফুট উঁচু। প্যারামিটার ওয়ালের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৬২৮ আরএফটি। আর প্যারোমিটার ওয়ালের উচ্চতা সমতল ভূমি থেকে ১৮ ফুট উঁচু। কারাগারের ভেতরে ১৬ একর, বহিরাংশের ভূমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৩৬ একর। কারাগারে মোট ৫৯টি স্থাপনার মধ্যে কারাগারের ভেতরে ২৭টি এবং বহিরাংশে ৩২টি।
এই কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা মোট ২ হাজার। এরমধ্যে হাজতি ১ হাজার ৫১০ জন ও কয়েদি ৪৯০ জন। হাজতিদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৪৪০, নারী ৭০ জন। কয়েদিদের মধ্যে পুরুষ ৪৬০ এবং নারী ৩০ জন। অনুমোদিত জনবল ৪৫২ জনের স্থলে রয়েছে ৩৭৮ জন।