বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ব্রাজিল। আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে যথারীতি ফেবারিটের তকমা লেগেছে তাদের গায়ে। নেইমার-ভিনিসিয়াস-জেসুসদের নিয়ে গড়া দলটির নিখুঁত আক্রমণ আশা দেখাচ্ছে ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের।
তবে এবারের বিশ্বকাপে হলুদ জার্সিধারীদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা রক্ষণভাগ। হলুদ জার্সিধারীদের দুই ফুলব্যাক পজিশন কোচ তিতের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়েই আসতে পারে এবারের বিশ্বকাপে। দানি আলভেস কিংবা ফর্ম হারানো সান্দ্রো, দানিলো, অ্যালেক্স তেলেসদের একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিশ্বকাপের ২৬ সদস্যের দলে রাখা হয়েছে।
এমন সংকটের মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের চোট। দলটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন সেশনে ডিফেন্ডার অ্যালেক্স তেলেস চোট পেয়েছেন। তার চোটের কারণ নেইমার। পেছন থেকে ট্যাকল করেছিলেন তাকে। তৎক্ষণাৎ মেডিকেল টিম ছুটে আসেন তার কাছে। সে সময়ে চলা অনুশীলন ম্যাচ কোচ তিতের আদেশে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হয়। এরপর বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তেলেসকে।
এছাড়া দলের আরেক মিডফিল্ডার ব্রুনো গিমারেসও পেয়েছেন চোট। সতীর্থ রদ্রিগো গোয়েজ মাড়িয়ে দিয়েছেন তার পা। যে কারণে খোঁড়াতে খোঁড়াতে অনুশীলন মাঠ ছাড়তে হয়েছে। পরে অনুশীলনে ফিরলেও শেষমেশ তাকে সেখানে খোঁড়াতেই দেখা যায়। ইতালির তুরিনে জুভেন্তাসের মাঠে হয়েছে ব্রাজিলের অনুশীলন। গতকাল অনুশীলন সেশন শেষে দোহার উদ্দেশে রওনা দেয় সেলেসাওরা।
আগামীকাল পর্দা উঠছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপের। আগামী ২৪ নভেম্বর বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। সে লক্ষ্যেই গত ৭ নভেম্বর বিশ্বকাপের ২৬ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছিল ব্রাজিল।
দলে তেমন কোনো চমক নেই। দীর্ঘদিন ধরে যে স্কোয়াড নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে, তাদের ভেতর থেকেই সেরা ২৬ জন ফুটবলারকে বেছে নেয়া হয়েছে। তবে জায়গা হয়নি রবার্তো ফিরমিনোর। বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছেন নেইমার-ভিনিসিয়াসরা। পিএসজির হয়ে গেল মৌসুমটা ভালো না কাটলেও চলতি সিজনে সেরা ফর্মে নেইমার।
অন্যদিকে রিয়ালের জার্সিতে দাপট দেখাচ্ছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বার্সা ফরোয়ার্ড রাফিনহাও আছেন সেরা ছন্দে। তাদের নিয়েই কাতারে আরো একবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরার লক্ষ্য দলটির।
এবারের বিশ্বকাপে থাকা হট ফেবারিট দলগুলোর মধ্যে আক্রমণভাগে সবার চেয়ে এগিয়ে তিতের শিষ্যরা। করিম বেনজেমা-ভিনিসিয়াস জুনিয়র কম্বিনেশন গত মৌসুমে নান্দনিক খেলা উপহার দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জিতিয়েছিল। ভিনিসিয়াসের সঙ্গে ঠিক একই কম্বিনেশন যদি নেইমারের হয়, তাহলে কাতার বিশ্বকাপ নিশ্চিত দখলে নেবে ব্রাজিলই।
তাদের সঙ্গে রাফিনিয়া, অ্যান্তোনি, রদ্রিগো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রিচার্লিসন, পেদ্রো, গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি আক্রমণভাগে করে তুলবে অপ্রতিরোধ্য। কাকে দিয়ে কখন প্রতিপক্ষের জাল বিধ্বস্ত করবেন সেটাই এখন চিন্তার বিষয় কোচ তিতের জন্য।
যুক্তরাজ্যের ফুটবলবিষয়ক ম্যাগাজিন ফোরফোরটুয়ের গত মে মাসের প্রকাশিত ফিচারে বর্তমান বিশ্বের সেরা গোলকিপার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন অ্যালিসন বেকার। বল থেকে তার দৃষ্টি ফেরে না মুহূর্তের জন্য। বাতাসে ভেসে বল রক্ষায় সিদ্ধহস্ত লিভারপুলের এ প্রাচীর গোলপোস্টে ব্রাজিলের অন্যতম ভরসার প্রতীক। সেলেসাওদের আরেক প্রাচীর ম্যানচেস্টার সিটির এডারসন। গত মৌসুমে সিটির হয়ে তার রেকর্ড ২০টি ক্লিন শিটস আছে। তার যোগ্যতা প্রমাণে এর চেয়ে বেশি পরিসংখ্যানের প্রয়োজন নেই।