বিভাগীয় গণসমাবেশকে যেন বাঁধ ভাঙার আওয়াজ উঠছে সিলেট শহরজুড়ে। এ যেন এক উৎসবের নগর। মুহুর্মুহু মিছিল, প্রচার প্রচারণা, রাজনৈতিক আড্ডা চলছে শহরের অলিগলিতে। সুযোগ পেলেই নেতাকর্মীরা ছুটে আসছেন আলিয়া মাঠে। এভাবেই চলছে গত কয়েকদিন থেকে।
সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শনিবার (১৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ উপলক্ষে সিলেটের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে এসে জড়ো হতে শুরু করেছেন। সমাবেশস্থলে এসে নেতাকর্মীরা স্লোগান ও গানে গানে মুখরিত করে রেখেছেন। আসা-যাওয়া চলছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন। মাঠ পরিদর্শন করছেন। গণমাধ্যম কর্মীরা আসছেন। সংবাদ সংগ্রহ করছেন। লাইভ সম্প্রচার করছেন। সমাবেশস্থলের মাঠের বিভিন্ন প্যান্ডেলে তরুণ নেতাকর্মীরা বড় বড় সাউন্ড বক্স ও স্পিকারে কাজী নজরুল ইসলামের রণ সংগীত, শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণ দত্ত ও দেশাত্মবোধক গানের তালে নেচে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর সমাবেশস্থল। সব মিলিয়ে এভাবেই উৎসবের নগর হয়ে ওঠেছে সিলেট।
সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা জানান, সিলেট বিভাগজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই চলে এসেছেন দুদিন আগে।
সমাবেশেস্থলের একটি প্যান্ডেলে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। শীঘ্রই এই সরকারের পতন হবে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটবে।’
এদিকে সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে সরকারি আলিয়া মাঠে রাত কাটিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী। আনন্দ, গল্পগুজব, রান্নাবান্না করেই সময় কাটিয়েছেন তারা। কিছু রাতের খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও।
জানা গেছে, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। একইসাথে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের বাস মালিক নেতারা দুইদিনের ধর্মঘটের ডাক দেন। আজ সকাল ৬টা থেকেই উল্লেখিত তিন জেলায় পরিবহণ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। তবে সিলেটের ধর্মঘট শুরু হবে আগামীকাল সমাবেশের দিন সকাল ৬টায়।
এমন বাস্তবতায় সিলেটের সব জেলা থেকে ধর্মঘট শুরুর আগেই হাজারো নেতাকর্মী সিলেট এসে পৌঁছেছেন। এদের কেউ কেউ উঠেছেন আত্মীয়স্বজনদের বাসায়, কেউ উঠেছে হোটেলে আবার কোথাও জায়গা না পেয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী আলিয়া মাঠেই রাত যাপন করেছেন।
দূরদূরান্ত থেকে আসা কর্মীদের জন্য মাঠের পাশজুড়ে আলাদা তাবু টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। যারা আসছেন আগে থেকেই রান্নার প্রস্তুতি নিয়ে আসছেন এবং মাঠেই করছেন রান্নাবান্না।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র জিকে গৌছ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আজকেই সিলেটে চলে এসেছেন। এখানে তাদের বিশ্রাম ও খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা বাধার কারণে আগেভাগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নেতা-কর্মীরা সিলেটে আসতে শুরু করেছেন। তাদের জন্য এসব ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ক্যাম্প করা হয়েছে। এই মাঠেই তারা কাটাবেন দুই রাত।
এর আগে সমাবেশস্থলে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বিকেলে বিএনপির স্থানী কমিটির সদস্য মঈন খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পরিদর্শন করেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে সমাবেশের জন্য ৭০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ প্রায় শেষ।
নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলের নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবিতে দেশের সব বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরের পর সিলেটে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। এটি হবে বিএনপির সপ্তম বিভাগীয় গণসমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।