হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় সোনাই নদীর উপর নির্মিত রাবার ড্যামটি বালুদস্যু ও উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে গত কয়েক বছর আগে বিধ্বস্ত হলেও এখন পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি। ভেঙে গেছে রাবার ড্যামের অফিস ঘর ও পাহারাদার থাকার ঘরটিও। রাবার ড্যামের উপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে যেকোনো সময়। সেতুর দুই পাশের গোড়ার মাটি ইতোমধ্যে সরে গেছে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামটি কোনো কাজে আসছে না কৃষকদের।
ধর্মঘর, চৌমুহনী ও বহরা ইউনিয়নের কৃষকদের সেচের সুবিধার জন্য ২০০২ সালে সোনাই নদীর চৌমুহনী এলাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল রাবার ড্যাম। শুকনো মৌসুমে কৃষকরা সোনাই নদীর পানি দিয়ে তাদের জমি চাষাবাদ করতেন। রাবার ড্যামের কাছ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে ২০১৭ সালে বিধস্ত হয় সোনাই নদীর চৌমুহনী এলাকায় নির্মিত রাবার ড্যামটি। এরপর থেকে শুকনো মৌসুমে এই এলাকার কৃষকরা জমি চাষাবাদ করতে পারছেন না। এতে করে প্রায় ৮০০ হেক্টর কৃষিজমি চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। অতি দ্রুত রাবার ড্যামটি সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি সদস্য কৃষক রঞ্জিত বলেন, রাবার ড্যাম না থাকাতে আমাদের বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। কোনো কৃষিকাজ হচ্ছে না। কৃষিকাজ করতে গেলে পানি বাবদ প্রতি শতকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয়।
স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সোনাই নদীর রাবার ড্যামে অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। আমরা জমি চাষ করতে পেরেছি অনেক কম খরচে। রাবার ড্যাম ভেঙে যাওয়াতে আমাদের কৃষকদের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। রাবার ড্যামের উপর নির্মিত সেতুটি দিয়ে ৩টি গ্রামের মানুষ আসা-যাওয়া করতেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা চলাফেরা করত। বালু উত্তোলনের কারণে রাবার ড্যামটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের চলাফেরা করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।
রাবার ড্যামের পাহারাদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, যে ঘরটায় তারা থাকেন সেই ঘরটিও ভেঙে গেছে। তারা এখন সেই ঘরে থাকতে পারেন না। সোনাই নদীর রাবার ড্যামও ভেঙে গেছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান তিনি।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, বর্তমানে রাবার ড্যামটির অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে গেছে। রাবার ড্যামে ১ হাজার ২০০ সদস্য রয়েছেন। তারা বর্তমানে কোনো সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছেন না। ১ হাজার ২০০ সদস্যের সঙ্গে অনেক খাদ্য জড়িত আছে। এটা মেরামত করে আমাদের সুযোগ-সুবিধা করে দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমরা চাই সোনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন একেবারে বন্ধ হয়ে যাক।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল মোবারক বলেন, সোনাই নদীর উপরের রাবার ড্যামটি ২০০২ সালে নির্মিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে ড্যামটি বিধস্ত হয়। বিধস্ত হওয়ার একমাত্র কারণ বালুখেকোদের দ্বারা বালু উত্তোলনের ফলে পেছন দিক দুর্বল হওয়াতে রাবার ড্যামটি বিধস্ত হয়েছে। আমাদের যে অফিস ঘরটি ছিল সেটিও ভেঙে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, কৃষকদের কল্যাণে দ্রুত যেন রাবার ড্যামটি মেরামত করা হয়।
মাধবপুর উপজেলার প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, সোনাই নদীর রাবার ড্যাম উন্নয়ন করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিম এখানে এসে পরির্দশন করার কথা রয়েছে।