রিজার্ভের টাকা দেশের কাজে দেশেই আছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে রিজার্ভের টাকা ধার দেয়ায় দেশের টাকা দেশেই থেকেছে। সেই ধারের সুদ দেশই পেয়েছে, যাতে দেশের লাভ হয়েছে। এভাবে রিজার্ভের টাকা দেশ ও জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং এতিমের টাকা লোপাট করার মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না।’

শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর যুব মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা ভাবে। উন্নয়নের জন্য কাজ করে। সেটা সরকারে এসে আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি।’

তিনি তার সরকারের আমলে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ উন্নয়ন প্রকল্প এবং পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘বিএনপি সরকারে থাকতে উন্নয়ন না করে লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। আর এখন বিদেশ থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।’

এসময় তিনি দুর্নীতি সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদে যাতে যুবকরা জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে কাজ করার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা শ্রেণি উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করেও তা অস্বীকার করছে। ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি। রাস্তাঘাট পুল-ব্রিজের উন্নতি করে সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ১০০টা ব্রিজ একসাথে উদ্বোধন করা আমি জানি না ইতিহাসে কেউ করেছে কি না।’

জনাকীর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমালোচনাকারীরা যত কথাই বলুক, বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবেই গড়ে তুলব। ওই এইট পাস দিয়ে আর মেট্রিক ফেইল দিয়ে দেশ চললে সেই দেশের উন্নতি হয় না, সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, এই ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বলেছিলেন। আমিও বিশ্বাস করি, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবেই গড়ে তুলব।’

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নসহ প্রাথমিক স্কুলে আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা উপকরণ দেয়া, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাইটেক পার্ক তৈরি করা, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি, আইটি ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা জায়গায় মহিলা যুবকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার সুযোগ পাচ্ছে। এই সুযোগটা আওয়ামী লীগ না এলে জীবনেও হতো না।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি কারও গিবত গাইতে আসিনি। আমি আমাদের তরুণ সমাজকে এইটুকু বলব, তরুণ সমাজেরই দায়িত্ব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যুবলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে। জাতির পিতাকে স্বাধীনতার পর অনেকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কোনো সম্পদ নাই, কিছু নাই, আপনি কী দিয়ে দেশ গড়বেন? তিনি বলেছিলেন আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি-মানুষ দিয়েই আমি দেশ গড়ব। আজকে সেটা প্রমাণিত সত্য। দেশপ্রেম থাকলে দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকলে এটা করা যায়। আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।’

মহাসমাবেশের মূল পর্ব পরিচালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত সকল শহীদেরর স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বক্তৃতা পর্ব।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।