আগের দিন শুক্রবার বিকেলে জৈন্তাপুর উপজেলার ছাতারখাই গ্রামের কতিপয় যুবকের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির পর শনিবার (০৫ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ভিকটিম মাসুম আহমদ ও তার পিতা আব্দুল খালিক কানাইঘাট উপজেলার চতুল বাজারে আসেন।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মাছুম আহমদ চতুল বাজারের পশ্চিম পাশে একটি পান-সুপারির দোকানে গেলে সেসহ তার পিতা আব্দুল খালিকের উপর আগের দিনের ক্রিকেট খেলার মাঠের বিরোধের জের ধরে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বাবুল আহমদ, তার ভাই নিজাম উদ্দিন, তফজ্জুল আলী, রাসেল আহমদ, কামরুল ইসলাম সহ ২০/২৫ জন।
আব্দুল খালিক দৌড় দিয়ে একটি দোকানে ব্যবসায়ীদের সহায়তায় আশ্রয় নিলেও তার ছেলে মাছুম আহমদকে রাস্তার উপর উপর্যুপরি দেশীয় ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠি-সোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বাজারের লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাছুম আহমদকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সে পথিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
চতুল বাজারের ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের ছাতারখাই গ্রামের মাঠে ক্রিকেট খেলা নিয়ে ছাতারখাই গ্রামের বাবুল আহমদের পুত্র রাসেল আহমদ একই গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র খায়রুলকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় মুরব্বীরা বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
সেই আশ্বাসে বাইরে থেকে আশ্বস্ত হলেও থামেনি ভেতরের ক্রোধ। যে ক্রোধের বলি হল অটোরিকশা চালক মাছুম।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কানাইঘাট থানা ও জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সিওমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, মাছুম আহমদ জৈন্তাপুর উপজেলার আমিনা-হেলালী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের দশম একজন শিক্ষার্থী। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার ভাইয়ের সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চালাতো। সেসহ তার পরিবার অত্যন্ত নিরীহ। হামলাকারী প্রভাবশালী হওয়ার কারণে দলবদ্ধ হয়ে চতুল বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পিতার সামনেই কুপিয়ে মাছুম আহমদকে হত্যা করেছে। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
নিহতের নিকটাত্মীয়রা জানান, পরিকল্পিতভাবে মাছুম আহমদকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানান, ‘জৈন্তাপুরে ছাতারখাই গ্রামে ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কানাইঘাটের চতুল বাজারে মাছুম আহমদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাকে হাসপাতারে নেওয়ার পথে মারা যায়। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে থানায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে তিনি জানান।