দিনাজপুরে মুলার কেজি ১৩ টাকা, বেগুন ১৫

হিমালয়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় উত্তরের জেলা দিনাজপুরে আগেভাগেই শীত অনুভূত হয়। শীত মানেই বাজারে শাকসবজির সমাহার। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বাজারে উঠেছে শীতকালীন আগাম শাকসবজি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শাকসবজির দাম একটু বেশি বলছেন ক্রেতারা। যদিও কৃষক ও চাষিরা বলছেন, কিছু কিছু সবজির দাম বেশি। অন্যান্য সবজির দাম কম পাচ্ছেন। এর মধ্যে মুলার কেজি ১৩ এবং বেগুন ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।

দিনাজপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, মুলা এবং গাজরসহ হরেক রকম সবজি দেখা গেছে। পাশাপাশি বাজারে রয়েছে লাল শাক, পুঁই শাক, পালং শাক, নাপা শাক, সরিষা শাক, সবুজ শাক ও ডাঁটা শাক।

কৃষক ও চাষিরা জানিয়েছেন, শাকসবজি ক্ষেতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব তেমন পড়েনি। এ বছর রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ কম। সার ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং বাড়তি সেচের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার শাকসবজির দাম একটু বেশি। ভালো দাম পাওয়ায় খরচ উঠিয়ে লাভের আশা করছেন তারা।

রবিবার (৩০ অক্টোবর) সরেজমিনে জেলার বাহাদুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, মুলা, বেগুন, গাজর, টমেটো, ঢ্যাঁড়স, করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক ও পালং শাকসহ বাজারে সব ধরনের শাকসবজি রয়েছে।

পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে ফুলকপি এবং বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮-৫০, শিম ৬৫-৭০, বরবটি ৩৮-৪০, মুলা ১৩-১৫, বেগুন ১৫-১৬, গাজর ১৩০-১৩৫, টমেটো ৯৫-১০০, ঢ্যাঁড়স ২৩-২৫, মিষ্টি কুমড়া ২৫-২৬, লাউ প্রতি পিস ২৫-২৭, করলা ২৩-২৫ টাকা। পাশাপাশি লাল শাক প্রতি আঁটি ৫-৭, পালং শাকের আঁটি ১০-১২ (প্রতি আঁটিতে ৩০০-৪০০ গ্রাম) এবং পুঁই শাক প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকা।

তবে খুচরা বাজারে দাম আরেকটু বেশি। শহরের নিউটাউন এলাকা, কলেজ মোড় ও বিভিন্ন খুচরা বাজারে ফুলকপি এবং বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫-৬০, শিম ৭৫-৮০, বরবটি ৪৫-৫০, মুলা ১৫-২০, বেগুন ১৮-২০, গাজর ১৩৫-১৪০, টমেটো ১১৫-১২০, ঢ্যাঁড়স ২৮-৩০, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৩২ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৩০-৩২, করলা ২৮-৩০ টাকা। লাল শাক প্রতি আঁটি ৯-১০, পালং শাকের আঁটি ১৫-২০ এবং পুঁইশাক প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা।

সদর উপজেলার দিঘন এলাকার কৃষক নয়ন কুমার বলেন, ‘এ বছর শাকসবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফসলে পোকার আক্রমণ দেখা দেয়নি। কয়েকদিন আগে ঝড় নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। তবে তার প্রভাব পড়েনি। এখন হালকা বৃষ্টি হলে ভালো হতো। আজ বাজারে বরবটির কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এমন দাম থাকলে ভালোই লাভ হবে।’

একই এলাকার কৃষক চন্দন রায় বলেন, ‘আমি আগাম মুলা, লাল এবং পালং শাক আবাদ করেছি। দাম ভালোই পাচ্ছি। পালং শাকের আঁটি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। মুলার কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টি কম। হালকা বৃষ্টি হলে শাকসবজির ফলন আরও ভালো হতো। তবু এখন পর্যন্ত ফসল ভালো আছে। এই দাম থাকলে লাভবান হবো।’

কলেজ মোড় এলাকার সবজি ক্রেতা মালেকা বানু বলেন, ‘বাজারে শীতকালীন শাকসবজির সরবরাহ ভালো। কিন্তু দাম চড়া। এত দাম দিয়ে শাকসবজি কেনা আমাদের জন্য কষ্টকর। নতুন শাকসবজি খেতে তো সবারই মন চায়। তাই বেশি দাম দিয়ে কিনেছি। না কিনে উপায় নেই।’

নিউটাউন এলাকার বাসিন্দা মো. ওলিউল্লাহ বলেন, ‘বাজারে প্রচুর শাকসবজি উঠলেও দাম অনেক বেশি। তবু কিনেছি। কোনও জিনিসের দাম তো কম নয়। তবে শাকসবজির দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। শাকসবজি ছাড়া তো চলে না। বাধ্য হয়েই কিনতে হয় আমাদের।’

কলেজ মোড়ের খুচরা সবজি বিক্রেতা ফরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে শীতকালীন শাকসবজি উঠেছে। তবে দাম বেশি। কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে বাজার করতে আসা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য দামটা অনেক বেশি। বেশি দাম হওয়ায় আমরা কম কিনে কম বিক্রি করছি। কারণ বেশি কিনলে বিক্রি না হলে পচে যাবে। ক্রেতারা সবসময় টাটকা শাকসবজি চান।’

শহরের সবজি ব্যবসায়ী কমল চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাজারে আগাম শাকসবজি উঠেছে। দাম বেশি হলেও ক্রেতারা কিনছেন। তবে স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য এত দাম দিয়ে শাকসবজি কেনা কষ্টকর। উৎপাদন ও অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় এবার শাকসবজির দাম বেশি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এবার জেলায় দুই হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। এখনও আবাদ চলছে। এরই মধ্যে আগাম শাকসবজি বাজারে উঠেছে। তবে দাম বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. মাহবুবুর রশীদ বলেন, ‘জেলার বাজারগুলোতে শীতকালীন শাকসবজি উঠতে শুরু করেছে। এগুলো আগাম শাকসবজি। এজন্য দাম বেশি। কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এবার শাকসবজিতে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ কম হয়েছে। আশা করছি, প্রচুর ফসল উৎপাদন হয়েছে। সামনে আরও দাম কমবে বলে আশা করছি।’