মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের একটি চা-বাগানে ৪ পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা ও তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন চা শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাতে ইউনিয়নের দিলদারপুর চা-বাগানের পূজামণ্ডপে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রব মাহাবুব ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শ্যামাপূজা উপলক্ষে সোমবার রাত থেকে দিলদারপুর চা-বাগানের শ্রমিকদের উদ্যোগে বাগানের পূজামণ্ডপে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছিল। স্থানীয় কিছু লোক মণ্ডপের পাশে জুয়া ও তাস খেলছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে কুলাউড়া থানার এএসআই আক্কাস উদ্দিনসহ ৪ পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে সেখানে উপস্থিত হয়ে জুয়াড়িদের মারধর করে আটকের চেষ্টা করেন। তখন উপস্থিত লোকজন উত্তেজিত হয়ে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। তখন প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা মণ্ডপের পাশের একটি ঘরে আশ্রয় নেন।
এসময় উত্তেজিত লোকজন রাস্তার পাশে রাখা পুলিশ সদস্যদের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বাগান ও আশপাশের এলাকার শতাধিক লোক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চা শ্রমিক বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে কুলাউড়া থানার এএসআই আক্কাস উদ্দিন অপরিচিত আরও ৩ জন সাদা পোশাকের পুলিশ নিয়ে মণ্ডপে এসে আমাদের কাছে টাকা দাবি করেন। কেন টাকা দেবো এমনটি বলার সাথে সাথে আক্কাস ও তার সহযোগীরা আমাদের মারধর করে আটকের চেষ্টা করেন। তখন উপস্থিত লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাদের ওপর হামলা করেন।
এদিকে পার্শ্ববর্তী বিজয়া চা-বাগানের কয়েকজন শ্রমিক জানান, সন্ধ্যার পরপরই এএসআই আক্কাস ও আরও ৩ জন সাদা পোশাকের পুলিশ এসে আমাদের বাগানের মণ্ডপের পাশে বিভিন্ন লোকজনকে ধরপাকড়ও করেন। পরে তারা টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এসময় জ্বালানী কাঠ বোঝাই একটি ট্রাক আটক করে চালকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন।
এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এএসআই আক্কাসের সাথের দু’জন পুলিশ সদস্য কুলাউড়া থানার নয়। এমনকি তারা (পুলিশ সদস্যরা) সকলেই মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ছুটিতে ছিলেন।
কুলাউড়া থানার অভিযুক্ত এএসআই আক্কাস উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ৩ জন কনস্টেবল সঙ্গে নিয়ে দিলদারপুর চা-বাগান এলাকায় যান। তারা সাদা পোশাকে দুটি মোটরসাইকেলে ছিলেন। ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পূজামণ্ডপের কাছে জুয়া খেলা চলতে দেখেন। এসময় মোটরসাইকেল থামিয়ে তিনি জুয়া খেলা বন্ধ করতে বলেন। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে চা-বাগানের লোকজন তাদের ওপর চড়াও হন।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রব মাহাবুব পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দিলদারপুর চা-বাগানের পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠান চলছিল। পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, দিলদারপুর চা-বাগানে জুয়া খেলায় বাধা দেয়া নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল বলে তিনি খবর পেয়েছেন। কোনো পুলিশ সদস্য লাঞ্ছিত হয়েছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার জাকারিয়া আহমদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।