ওসমানীনগর ট্র্যাজেডি : বেঁচে রইলেন মাত্র একজন

ফাইল ছবি

সিলেটের ওসমানীনগরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ পরিবারের ৩ সদস্যের মৃত্যুর পর প্রায় ৩ মাসের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুসনে আরা বেগম (৪৫)। ওই পরিবারে এখন বেঁচে রইলেন মাত্র একজন।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুসনে আরা বেগম মারা যান।

এর পূর্বে গত ২৫ জুলাই অচেতন অবস্থায় রফিকুল ইসলামসহ তার পরিবারের ৫ প্রবাসীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ব্রিটিশ নাগরিক রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসক।

স্ত্রী হুসনে আরা বেগম, বড় ছেলে সাদিককুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলামকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ১১ দিন পর হাসপাতালের আইসিইউতে সামিরা ইসলাম মারা যান। প্রায় ৩ মাসের মাথায় সামিরার মা হুসনেআরা বেগমও চলে গেলেন না ফিরার দেশে।

হুসনে আরা বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাইন ও মৃতের ভাই গোলাম মোস্তফা।

পুলিশের ধারণা, ঘটনার রাতে দীর্ঘসময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস প্রশ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী হুসনে আরা, অপর এক ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম। জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরনের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়।

গত ৩ আগস্ট হুসনে আরা ও সাদিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হলে মা-ছেলে পুনরায় তাজপুরের ভাড়া বাসায় ওঠেন। ওইদিন বাসায় ফেরার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

পরবর্তীতে ২৩ আগস্ট নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন সিলেট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাবা ছেলে ও মেয়ে অক্সিজেন-স্বল্পতায় মারা গেছেন। মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে মৃত্যুর কারণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে হুসনে আরা বেগম পুত্র সাদিককুল ইসলামকে নিয়ে ওই বাসায় না থেকে উপজেলার বড় ধিরারাই গ্রামে নিজের পিত্রালয়ে কিছুদিন থাকার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় হুসনে আরার। পরে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে মারা যান হুসনেআরা।

উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম পরিবারের ৫ সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। ঢাকায় এক সপ্তাহ থেকে বড় ছেলে সাদিকুলের চিকিৎসা শেষে ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোডস্থ ইউপি চেয়ারম্যান অরুণোদয় পার ঝলকের ৪তলা বাসার দুতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেন। ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন রফিকুলের শ্যালক দিলওয়ার। দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ দরজা ভেঙ্গে অচেতন অবস্থায় ৫ প্রবাসীকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্ত্রী হুসনেআরা, বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলামকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। ১১ দিন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় লাইিফ সাপোর্টে থাকা সামিরাও মারা যায়। রফিকুলের স্ত্রী হুসনেআরা ও ছেলে সাদিকুল বাড়ি ফিরলেও ৩ মাস পর হুসনে আরাও অবশেষে মারা গেলেন। ৫ জনের পরিবারের একমাত্র সদস্য প্রবাসী সাদিকুল ইসলাম বেঁচে আছে।