নারায়ণগঞ্জে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু’ ১১ অক্টোবর উদ্বোধনের পর সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন দুপুরের তপ্ত গরম শেষে বিকাল হতেই সেতুতে ভিড় দেখা যায়। দর্শনার্থী ও যাত্রীদের কেন্দ্র করে সেখানে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন। খুদে ব্যবসায়ীরা পেশা ও পেশার স্থান বদল করে সেতুর আশেপাশে ব্যবসা জমিয়েছেন। বদলে যেতে শুরু করেছে সেখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা।
এই সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন যাত্রী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখে অনেক ছোট ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার স্থান বদল করেছেন। সেতুর আশেপাশে নানা পেশার ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসেছেন। কেউ কেউ নতুন ব্যবসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সেতুর পশ্চিমপাড়ে সৈয়দপুর এলাকার বাসিন্দা লিটন মিয়া অনেকদিন যাবৎ অবসর সময় পার করছেন। সেতু উদ্বোধনের পরে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখে দোকান খুলে নানা পণ্য বিক্রির কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক মানুষ সেতু দেখতে আসে, ঘুরতে আসে। এখানে একটা দোকান খুলে বসলে অনেক টাকা আয় করা যাবে। তাই ভাবছি, কিছুদিনের মধ্যে সড়কের পাশে দোকান খুলে চা-পান, ডাব, কলাসহ বিভিন্ন রকমের ফল বিক্রি করবো। এতে অনেক টাকা আয় হবে।’
তিনি জানান, আগে একটা থান কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ বেকার অবস্থায় রয়েছেন। এখন শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় তিনি নতুন করে ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করছেন।’
একইভাবে স্থানীয় আজাদ হোসেন নতুন করে ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘সেতুর পূর্ব প্রান্তে টোল প্লাজা রয়েছে। তাই সেতুর পশ্চিম প্রান্তে দোকানপাট বেশ জমজমাট হবে। তা ছাড়া এই সড়কে ফ্লাইওভার হওয়ার কথা শুনেছি। সব মিলিয়ে বেশ ভালো ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বেকার যুবক শিপন চন্দ্র পাল বন্দরের সাবদি এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘ক্যালসিয়ামের অভাবে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। এ কারণে ওয়েলডিংয়ের কাজ জানা সত্ত্বেও কোথাও চাকরিতে যোগ দিতে পারছি না। বেশ কয়েক মাস ধরে বেকার জীবন যাপন করছি তাই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছি। এর মধ্যে সেতু উদ্বোধনের পরে অনেক দর্শনার্থীদের এখানে ভিড় করতে দেখেছি। তাই আজ আমড়া ও চিড়ার মোয়া নিয়ে বিক্রি করতে এসেছি। আমড়া ও মোয়া ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। এখন পর্যন্ত ভালোই বেচাকেনা হয়েছে।’
শীতলক্ষ্যা সেতুর দুই প্রান্তের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘সেতুর সড়ক প্রশস্ত করার কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। আশেপাশের দোকানপাট ভেঙে সড়ক বড় করা হবে। ফলে নানা পরিকল্পনা থাকলেও ব্যবসায়ীরা এগোতে পারছেন না। তারা সড়ক প্রশস্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। সেই কাজ সম্পন্ন হলে বিভিন্ন রকমের দোকান দিয়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বর্তমান দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে স্বল্প পুঁজিতে নানান ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে রেস্তোঁরা, কনফেকশনারি, নানারকমের ফলের দোকান ইত্যাদির ব্যবসার পরিকল্পনাও রয়েছে।’
সেতু হওয়ার ফলে মদনগঞ্জ-মুক্তারপুর রুটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালুর কথা ভাবছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে সেতুর সড়কের কাজ সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অটোরিকশাচালক বলছেন, ‘এখন যাত্রীপ্রতি ১০-১৫ টাকা ভাড়ায় শীতলক্ষ্যা সেতু পারাপার করা হচ্ছে। এখনও সেতুর পশ্চিমপাড়ের সড়কের কাজ শেষ হয়নি। এই কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে মদনগঞ্জ-মুক্তারপুর রুটসহ আরও বিভিন্ন রুটে অটোরিকশা চালু হতে পারে। এই বিষয় নিয়ে মালিকরা আলোচনা করছেন। তবে অটোরিকশা প্রধান প্রধান সড়কে চলাচলের ব্যাপারে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে এটা বাস্তবায়ন হবে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা সেতু হওয়ার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ উন্নতি হবে। এই সেতু পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ট্রানজিট হিসেবে কাজ করবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করার ফলে এখানে কল-কারখানা গড়ে উঠবে। আর সেতুর সড়কের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে নানান ব্যবসা প্রাণ ফিরে পাবে। এতে আমাদের জীবন যাত্রার মান আরও উন্নয়ন হবে।’
সেতুর সড়কের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ‘সেতুর সড়ক নিয়ে দুই মেয়াদে পরিকল্পনা রয়েছে, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সেতুতে ছয় লেনের সড়ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেহেতু এটি করতে অনেক সময় লাগবে, তাই স্বল্পমেয়াদে ১৮ ফুটের সড়ককে ২৪ ফুট করা হবে। আগামী জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হয়ে যাবে।’