প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার শেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের আসামমুড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক আহমদ শফি। সোমবার (১৭ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ঘুম ভাঙে তার। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরের চাল উড়ে যায় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে। শুধু ঘরের চালই নয়, আধাঘণ্টার মতো স্থায়ী হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে পুরো ঘর তছনছ হয়ে যায় তার। এ অবস্থায় পরিবারের ১১ সদস্যকে নিরাপত্তা দিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন তিনি।
আহমদ শফির মতো এমন অবস্থা পাথারিয়া ইউনিয়নের আসামমুড়া ও দরগাহপুর গ্রামের অন্তত ৪০টি পরিবারের। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্যরা হলেন- দরগাহপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম, কিবরিয়া, ইউনুছ আলী, জমির আলী, নিজাম উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আঙ্গুর মিয়া, আলিফ পাঠান, মকদ্দুছ আলী, মাছুম, আব্দুল হাদি, মুজাক্কির, আব্দুর রউফ, কাইয়ূম, শামছুল আলম, মাসুক মিয়া, মন্না মিয়া, সেলাল মিয়া, আছকিয়া খান, আব্দুর রহমান, হাকি মিয়া, সিদ্দিকুর খান, ইকবাল খান, তাই মিয়া, সেলিম পাঠান, মুক্তার আলী, কবির মিয়া, বসির মিয়া, মাহমুদা বেগম, সামাদসহ প্রায় ৪০টি পরিবার। মধ্যরাতের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে মাথাগোঁজার ঠাই হারিয়ে এখন দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার। ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ঘরবাড়ি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। স্বল্প আয়ে দিনাতিপাত করা এসব পরিবারে ঘূর্ণিঝড়ের হানা ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারি সহযোগিতার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নে। এতে ইউনিয়নের দরগাহপুর ও আসামমুড়া গ্রামের অন্তত ৪০টি কাঁচা ঘর, টিনশেডের ঘর, সেমিপাকা ঘর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাছপালা ভেঙে পড়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, বিদ্যুতের খুঁটিও হেলে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালা উপড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলার দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
এদিকে খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সকিনা আক্তার, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নুর হোসেন, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ভূইয়া ও ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পরিদর্শন করেন এবং সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া জানান, পাথারিয়া ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ে বসতঘর একদম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে সকল সহায়তা প্রদান করা হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ জামান জানান, দরগাহপুর গ্রামে অধিকাংশ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও তা দ্রুততার সাথে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।