‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই বাণীকে ধারণ করে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে বাউল শিরোমনি ফকির লালন শাহ’র ১৩২তম তিরোধান স্মরণে তিন দিনের স্মরণোৎসব।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় লালন একাডেমী, জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সোম থেকে বুধবার (অক্টোবর ১৭-১৯) পর্যন্ত এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ।
লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়েছেন সাধু ভক্ত-অনুসারীরা। দুইদিন পূর্বেই আগত ভক্ত আশেকানরা ঠাঁই নিয়েছেন শাঁইজির তীর্থ ভূমিতে। খন্ড খন্ড মজমায় চলছে ভাবের আদান প্রদান আর ত্বত্ত আলোচনা। রাতে লালন মঞ্চে গান পরিবেশন করবেন দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে আগত খ্যাতনামা শিল্পীরা।
লালন শাহ’র মাজার খেদমতে উৎসর্গীকৃত খাদেম মোহাম্মদ আলী শাহ বলেন, দুর দুরান্ত থেকে এখানে আগত ভক্তরা মনে করেন, দুই হাজার বছর পূর্বে দার্শনিক সক্রেটিসের সেই বিখ্যাত বানী ‘নো দাই সেলফ’ এর মতো মর্মকথা যেভাবে মানুষের মনে দাগ কেটেছিলো এবং বিশ্ব সভ্যতার ক্রমবিকাশকে প্রভাবিত করেছিলো। এতোকাল পরে এসে আধ্যাত্মিক চিন্তার দার্শনিক মহামতি লালনের সংগীত ও ধর্ম দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে মুক্ত চিন্তক গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
দুই দিন আগ থেকেই লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়েছেন সাধু ভক্ত-অনুসারীরা
যদিও এর আগে কার্যত বাউল সাধক ফকির লালন শাহের জীবদ্দশা থেকে চলে আসা দোল উৎসব এবং তিরোধান দিবস স্মরণে (১লা কার্তিক ১২৯৭)কে (১৭৭৪-১৮৯০) ঘিরে এই আধ্যাত্মিক দর্শনের গুরু লালন শাহের ভক্ত অনুসারীরা একেবারেই নিজস্ব ঘরানার রীতিতে আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সাঁইজিকে স্মরণ করতে এদিনটির জন্য অপেক্ষা করেন। তারই বাধভাঙ্গা সাধুর জোয়ারে কানায় কানায় পরিপূর্ন হয়ে উঠেছে সাঁইজির তীর্থ ধাম।
সকল প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ করে প্রতিবছর গুরুভক্তির টানে ভক্ত আশেকান বাউল অনুসারিরা ছুটে আসেন সাঁইজির এই তীর্থধামে। এখানে এসে কার্যত মানবাত্মা ও পরমাত্মার মিলন ঘটে।
বিশিষ্ট নাট্যকার ও গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, বাউল সাধক ফকির লালন ছিলেন আধ্যাত্মিক দর্শন ও ভাবজগতের শিরোমণি। ফকির লালন সাঁইজি একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক, বাউল সম্প্রদায়ের গুরু। ধর্ম বর্ণ গোত্র সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে মানবতাবাদী মনিষী ও লৌকিক ধর্মাচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম পুরোধা। তার গানের বাণীগুলি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গবেষণার ক্ষেত্রে বিস্তৃত। লালন কেবল বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষ নয় গোটা বিশ্বের গবেষকদের কাছে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
আখড়াবাড়ির মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা
লালন শাহের ১৩২তম স্মরণোৎসব উদযাপনে তিন দিনের আয়োজনকে ঘিরে লালন একাডেমী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
তিনি জানান, এখানে দেশ বিদেশ থেকে আগত ভক্ত অনুসারী বাউল সাধকদের আচার অনুষ্ঠান পালনের সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তাদের খাবার, সৌচকার্য, স্থান সংকুলানসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি, সবকিছু সুন্দর পরিবেশের মধ্যদিয়ে শেষ করতে পারব।