রাত পোহালেই সোমবার অনুষ্ঠিত হবে সিলেট জেলা পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৮নং ওয়ার্ড বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে সাধারণ সদস্য পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রচারণা ও ভোট সংগ্রহে সর্বশেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে এবার পরিবর্তনের গুঞ্জণ বেশি শুনা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই ওয়ার্ড থেকে কে হচ্ছেন নির্বাচিত সদস্য, তা নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের চলছে তর্ক-বিতর্ক আর নানা আলোচনা।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান নির্বাচনের পূর্বেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিয়ানীবাজার তাঁর নিজ উপজেলা হলেও নির্বাচনী আমেজ মোটেই ভাটা পড়েনি। উপজেলার সর্বত্র বইছে ভোট উৎসবের হাওয়া।
বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে ১৪৬ জন ভোটার। এর মধ্যে মোল্লাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান যুক্তরাজ্যে এবং একজন ইউপি সদস্যের উপর মামলা থাকায় তিনি ভোট দিতে কেন্দ্রে নাও আসতে পারেন। ফলে ভোটার সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১৪৪। তাদের আলোচনায় মূল প্রতিদ্বন্দিতার টেবিলে এখন এই ৩ প্রার্থী। তারা হলেন- মাথিউরা ইউনিয়নের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান ও বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সিহাব উদ্দিন (অটোরিক্সা), বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী খসরুল হক (উট পাখি) এবং বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের খণ্ডকালিন প্রভাষক উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আরবাব হোসেন খান (তালা)।
ভোটাররা বলছেন, প্রার্থী হিসেবে যোগ্যতার মাপকাটির দিক দিয়ে এই তিন প্রার্থীর মধ্যে যেকোন একজন নির্বাচিত হতে পারেন। এই তিন প্রার্থী আওয়ামী লীগের পদবীধারী নেতা। সিলেট জেলা, বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই পৃথকভাবে নীরবে এসব প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। সে হিসেবে বলা যায়, দলীয় ভোট ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার পর অন্য ভোটারদের নিজের দিকে টানতে নিজগুণ, যোগ্যতা ও কৌশলী ভূমিকা নিতে পারবেন যিনি, তিনিই বিজয়ী হবেন।
তবে প্রতিদ্বন্দিতার টেবিলের আলোচনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও শেষমেষ নির্বাচনী খেল দেখাতে পারেন এই ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য নজরুল হোসেন (ফ্যান প্রতীক)। অনেকের ধারণা, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপির ঘরনার ভোট তার পক্ষে নেই। কিন্তু সমঝোতার রাজনীতিতে শেষ বলে কিছুই নেই- এই হিসেবের পাল্লায় তিনি বিজয়ী হলেও হতে পারেন।
এছাড়া চারখাই ইউনিয়নের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী (হাতি প্রতীক), বঙ্গবন্ধু কিশোর মেলা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ময়েজ শেঠ (টিফিন ক্যারিয়ার) ও বিয়ানীবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাদির (ক্রিকেট ব্যাট) – এই তিন প্রার্থীর ভোট ব্যাংক প্রায় একই বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, সাবেক ছাত্রনেতা ও ফ্রান্স প্রবাসী আলিম উদ্দিন সুমন (ঘুড়ি) ও আলী আহমদ (টিউবওয়েল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও ভোটের মাঠে আলোচনায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন।
৮নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রলোভন কিংবা ভোটাদের প্রভাবিত করার বিষয়টিও আলোচিত সাধারণের মাঝে। এলাকা, গোত্র থেকে কিংবা নিজ বলয়ের প্রার্থীকে জয়ী করতে রাজনৈতিক নেতারা কড়া নাড়ছেন ভোটারদের দরজায়। এতে দুয়েক জায়গায় সফল হলেও বিফল হতে হচ্ছে একাধিকবার। নির্বাচনের একদিন আগে ভোটারদের ইউটার্ণ করাতে বিভিন্ন ধরনের ইস্যু, আলোচনা ও লবিং চলছে। ঘন ঘন বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিজস্ব অঞ্চল, গোত্র ও বলয়ের মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিকতা ও সম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে এবারের নির্বাচনে ভোটাররা যোগ্য ব্যক্তিকেই ভোট দেবেন সেটিরই আভাস সর্বত্র।
এছাড়া যেকোন নির্বাচনেই টাকার প্রভাব প্রধান একটি ফ্যাক্ট। এবারও জেলা পরিষদ নির্বাচনে নগদ টাকার প্রভাবের সাথে সাথে নতুন মোটরসাইকেলসহ অন্য আরো অনেক বিষয় যুক্ত করেছেন প্রার্থী ও তাদের অনুসারিরা। বড় নেতার নিজস্ব লোক, কিংবা একটি অঞ্চলের প্রতিনিধি এসব প্রলোভন পাশে রেখে ভোটাররা কাকে নির্বাচিত করেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ।
উল্লেখ্য, জেলা পরিষদ ৮ং ওয়ার্ড বিয়ানীবাজারে সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে জেলা নির্বাচন অফিস। এছাড়াও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।