বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের সরাতে আইনি নোটিশ

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে সরাতে এবং সার্ক, বিমসটেক, আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোতে শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে স্থানান্তরের দাবিতে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান ।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তার ভূ-খণ্ডে মিয়ানমারের ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সন্তান জন্মগ্রহণ করছে। এদের প্রতিপালন করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বছর ১২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে; যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে এই ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে দাবি করে নোটিশে আরও বলা হয়, ‘সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ রোহিঙ্গাদের জন্য খরচ করা হচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি অনুযায়ী তিনটি শর্তের যে কোনও একটি পূরণ করলে কোনও নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে অন্য রাষ্ট্র আশ্রয় দিতে পারে। এই কথা উল্লেখ করে নোটিশে আরও বলা হয়, ‘প্রথমত, যদি আশ্রয় দানকারী রাষ্ট্র ১৯৫১ সালের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশন ও ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের স্বাক্ষরিত রাষ্ট্র হয়, সেই ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্র শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আইনগতভাবে বাধ্য। দ্বিতীয়ত, কোনও নির্যাতিত জনগোষ্ঠী যখন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো সেই জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। তৃতীয়ত, যদি একাধিক রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে শরণার্থী গ্রহণ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।’

‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের ক্ষেত্রে উল্লেখিত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি মানা হয়নি বলেও নোটিশে দাবি করা হয়। এ অবস্থায়, বাংলাদেশ কোনোভাবেই এককভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পারে না। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংস্থাগুলোকে এই রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে যে রাষ্ট্রগুলো আয়তনে বড় তাদের বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিতে হবে, এটাই আন্তর্জাতিক রীতি।

আইনি নোটিশে উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, ‘সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় লাখ লাখ সিরিয়ার শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশ করে। তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শরণার্থী গ্রহণের জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেয়। বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধে, ইউক্রেনের শরণার্থীরা ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এক্ষেত্রে একক কোনও দেশ এসব শরণার্থীদের বোঝা নেয়নি বরং সম্মিলিতভাবেভাবে নিয়েছে।

বাংলাদেশ সার্ক ও বিমসটেকের সদস্য। অপরদিকে মিয়ানমার বিমসটেক ও আসিয়ানের সদস্য। বর্তমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে এসব আঞ্চলিক সংগঠন সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ানকে দায়িত্ব নিতে হবে। এসব সংগঠনের বড় রাষ্ট্রগুলোকে অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিতে হবে। আয়তনে দিক দিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত ছোট একটি রাষ্ট্র যার আয়তন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। অপরদিকে সার্কের বড় আয়তনের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারতের আয়তন ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬৯ বর্গ কিলোমিটার, পাকিস্তানের আয়তন ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬ বর্গ কিলোমিটার, আফগানিস্তানের আয়তন ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৪ বর্গ কিলোমিটার। অন্যদিকে আসিয়ানের অন্তর্গত বড় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার আয়তন ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৯০৭ বর্গ কিলোমিটার, মালয়েশিয়ার আয়তন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪১১ বর্গ কিলোমিটার, থাইল্যান্ডের আয়তন ৫ লাখ ১৩ হাজার ১২০ বর্গ কিলোমিটার, ভিয়েতনামের আয়তন ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৩৬ বর্গ কিলোমিটার।

আইনি নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে অবিলম্বে এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোতে স্থানান্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে আয়তনে বড় রাষ্ট্রগুলোকে অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিতে হবে। সর্বোপরি শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্রগুলোকে এই রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে হবে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের উপর এই রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব চাপানো যাবে না। তাই এ আইনি নোটিশপ্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে বের করে সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোতে শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এই বিষয়ে ব্যাবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।