বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথরের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বন্যা-পরবর্তী সময়ে আবারও পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। টানা এক সপ্তাহ ধরে পর্যটকের ঢল নেমেছে জনপ্রিয় এ পর্যটনকেন্দ্রে।
গত দুইদিনে সরেজমিনে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসু হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে সাদা পাথরে। ভ্রমণে আসা পর্যটকের ঢলের কারণে সংকট দেখা দিয়েছে মূল স্পটে যাওয়ার বাহন ইঞ্জিনচালিত নৌকার।
পর্যটকেরা সিলেট শহর থেকে গাড়িতে করে এসে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর নৌকাঘাট থেকে প্রতি আটজনে একটি নৌকা নিয়ে যেতে হয় সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে। তবে নৌকাঘাটে দেখা গেছে প্রচুর মানুষের ভিড়। প্রতি আটজনের একজন লাইনে দাঁড়িয়ে ৮০০ টাকা দিয়ে নৌকা ভাড়া করছেন। তীব্র গরমের মাঝে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন নৌকার জন্য। পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তারপর নৌকা পেয়েছেন।
সাদা পাথর এলাকার পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে সাদা পাথরে পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু করে। সেটা আজ রোববারও অব্যাহত রয়েছে।
এমনিতেই বছরের এই সময় থেকে সাধারণত পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করলেও এবার বিজয়া দশমীর ছুটি পড়ে গত বুধবার। মাঝখানে বৃহস্পতিবার এক দিন অফিস খোলা থাকলেও পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর রোববার ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি। অনেকে আবার মাঝখানের বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পাঁচে পাঁচ করে ছুটি কাটাতে ভ্রমণে এসেছেন বলেই বন্যার সময় পর্যটক না আসার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
নৌকাঘাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষ দানু মিয়া বলেন, টানা এক সপ্তাহ ধরে সাদা পাথরে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজারের অধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছিল। সাম্প্রতিক বন্যার কারণে দুটি ঈদে সাদা পাথরে পর্যটক ছিল একেবারেই কম। সারা বছর আমরা যা আয় করি দুটি ঈদে তার থেকে বেশি আয় হয়। বন্যার কারণে পর্যটক না আসায় পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে পূজা ও অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন সাদা পাথরে হাজার হাজার পর্যটকের আগমনে আমাদের নৌকাগুলোর চাহিদা দুই-তিন গুণ বেড়েছে। এতে আমাদের আয়ও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আমাদের এখানে শতাধিক নৌকা আছে। প্রতিটি নৌকাই এখন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি ট্রিপ দিচ্ছে। দুই বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো সময় যাচ্ছে।
রংপুর থেকে বাইসাইকেলে সিলেটে ভ্রমণে এসেছেন তিন শিক্ষার্থী। তাদের একজন শিথিল আহমদ। তিনি বলেন, এবার ছুটিটা একটু লম্বা হওয়ায় ছয়জন মিলে সিলেট এসেছি। তিনজন সিলেটে এসে অন্য কোথাও না গিয়ে বাসে করে রংপুরে চলে গেছে। আমরা তিনজন আজ সাদা পাথর ভ্রমণে এসেছি। সাদা পাথরে এসে খুব ভালো লাগছে। তবে প্রচুর পর্যটক থাকায় নৌকা পেতে কষ্ট হয়েছে।
সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মনির হোসেন ও তারেক আহমদ। পর্যটকদের নিয়ে ছুটে চলাতেই তাদের আনন্দ ও আয়-রোজগার। তারা বলেন, বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘরও ক্ষতির মুখে পড়েছে। বন্যার সময় পর্যটক না আসায় আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কয়েকদিন ধরে সাদা পাথরে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসছেন। তাই আমাদের আয়ও বেড়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ ফটোগ্রাফি সোসাইটির সভাপতি মো. শরীফ আহমদ বলেন, সাদা পাথরে আমাদের প্রায় ৬০ জন ফটোগ্রাফার আছেন। তারা সবাই ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন। সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে যারা ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের অবস্থা প্রায় দুই বছর থেকে খারাপ। তবে কিছুদিন ধরে পর্যটকরা ভিড় করায় তাদের আয় সাধারণ সময়ের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি হচ্ছে। একেকজন প্রতিদিন ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন ছবি তুলে।
ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, সরকারি ছুটি থাকায় গত কয়েকদিনে কয়েক লাখ পর্যটকের ঢল নেমেছে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ছুটির দিনগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের একটি টিম পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটলেও পুলিশের নিরাপত্তার কারণে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।