ইরানজুড়ে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান বিক্ষোভে শামিল রয়েছে দেশটির স্কুলের ছাত্রীরাও। দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংস এই বিক্ষোভে এবার ইরানের হাই স্কুলপড়ুয়া মেয়েরাও অংশগ্রহণ করছে।
টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্কুল হলের ভেতরেই ছাত্রীরা মাথার হিজাব খুলে হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে। ‘স্বৈরাচারের মৃত্যু চাই’ স্লোগান দিচ্ছে।
স্কুলের বাইরেও মেয়েদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ছাত্রীরা বাধ্যতামূলক হিজাবের নিয়ম উঠিয়ে দেয়ার দাবিসংবলিত পোস্টার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে।
এদিকে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভে অংশ নেয়া দুই কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এর মধ্যে ১৬ বছর বয়সী সারিনা ইসমাইলজাদেহকে লাঠি (ব্যাটন) দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে বিক্ষোভ চলাকালীন নৈতিকতা পুলিশের অফিসাররাই তাকে আঘাত করেন।
আঘাতে তার মাথার খুলি চূর্ণ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা যায়। আরেক ১৭ বছর বয়সী কিশোরী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া নিকা শাকরামি নিখোঁজ ছিলেন। শুরুতে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ। পরে তার মৃতদেহ ফিরিয়ে দিলে দেখা যায় তার নাক কেটে ফেলা হয়েছিল এবং মাথায় ২৯টি আঘাতের চিহ্ন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি বলেছে, ‘ইরানি কর্তৃপক্ষ জেনেশুনে এমন মানুষদের ক্ষতি বা হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা কয়েক দশকের দমন ও অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমেছে।’
তবে মাহসার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আন্দোলনকে ইরানি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েল ও আমেরিকার চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
একেবারে শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করছেন ইরানি নারীরা।
হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।