বলা হয়, শিল্পী হতে গেলে আগে ভালো মানুষ হতে হয়, আর ভালো মানুষ বরাবরই দেশপ্রেমিক। এই কথার উজ্জ্বল উদাহরণ বলিউড অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ি। তিনি শুধু একজন তুখোড় অভিনেতাই নন, নিজের দেশ ও ভাষার প্রতি তার ভালোবাসাও অসামান্য।
হিন্দি ভাষার প্রতি তিনি এতটাই দায়িত্বশীল যে, ইংরেজিতে যদি কেউ সিনেমার চিত্রনাট্য পাঠান, সেটা কখনও গ্রহণ করেন না।
মনোজ মনে করেন, এখন শুধু সিনেমায় নয়, বাস্তব সমাজেও ইংরেজির দাপট দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা বিনোদন জগতের ভুল নয়। আমার মনে হয়, প্রতিটা মানুষ তার সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পাঠাতে পছন্দ করেন, সে ভালো, খারাপ বা মোটামুটি যা-ই হোক। আমরা চাই, আমাদের সন্তানেরা আগে ইংরেজি শিখুক। এরপর যদি সময় ও শক্তি থাকে, তাহলে অন্যান্য ভাষা শিখুক। আসলে আমরা তো পিতা-মাতা হিসেবেই ব্যর্থ হচ্ছি।’
শুধু বাবা-মা নয়, এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও ব্যর্থ মনে করেন মনোজ বাজপেয়ি। তার দাবি, ‘শিক্ষক হিসেবেও আমরা ব্যর্থ হচ্ছি; আমাদের সন্তানদের মধ্যে নিজস্ব ভাষার প্রতি সেই আবেগ তৈরি করতে পারছি না।’
যদিও এককভাবে কোনও বড় কাজ সম্ভব নয়, তবু নিজের জায়গা থেকে হিন্দি ভাষার জন্য লড়ছেন মনোজ। তিনি সবসময় দেবনাগরীতে (হিন্দি ভাষার লিপি) লেখা চিত্রনাট্য গ্রহণ করেন। ইংরেজিতে লেখা কোনও চিত্রনাট্য কেউ পাঠালে, সেটা সঙ্গে সঙ্গে ফেরত দেন অভিনেতা।
এ বিষয়ে মনোজের বক্তব্য, ‘এখানে খুব কম শিল্পী আছেন, যারা দেবনাগরীতে লেখা চিত্রনাট্য চান। এই ভাষার বাইরে যেকোনও স্ক্রিপ্ট আমি গ্রহণ করি না। যদি ইংরেজিতে লেখা হয়, তাহলে আমি সেটা ফিরিয়ে দেই। এর মানে এই নয় যে আমি ইংরেজি জানি না। জানি, কিন্তু শিল্পী হিসেবে আমাদের নিজেদের হিন্দিতেই উপস্থাপন করা প্রয়োজন। লেখা, পড়া এবং বলার সময় এটা আমাদের মাথায় থাকা উচিত।’
উল্লেখ্য, শুধু অভিনয়ের নৈপুণ্যে যে কয়জন বলিউড অভিনেতা তারকা খ্যাতি পেয়েছেন, তার অন্যতম মনোজ বাজপেয়ি। ভার্সেটাইল এই অভিনেতা জাতীয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের বহু সম্মাননা পেয়েছেন। তার ঝুলিতে রয়েছে ‘সত্য’, ‘শূল’, ‘কউন’, ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’, ‘রাজনীতি’র মতো নন্দিত সিনেমাগুলো। ২০১৯ সালে তাকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করেছে।
নন্দিত এই অভিনেতাকে সর্বশেষ দেখা গেছে ‘ডায়াল ১০০’ সিনেমায়। যেটি মুক্তি পায় ২০২১ সালের আগস্টে। বর্তমানে তিনি তুমুল জনপ্রিয় ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ ওয়েব সিরিজের তৃতীয় সিজনের কাজে ব্যস্ত।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস