ইউক্রেনের চার অঞ্চল- খেরসন, জাপোরিঝিয়া, দোনেতস্ক ও লুহানস্ক – রাশিয়ায় যুক্ত করতে চলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এই চার ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার বলে ঘোষণা করবেন তিনি।
এ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পুতিন প্রশাসন। এতে করে সাত মাস ধরে চলে আসা এই যুদ্ধের তীব্রতা নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনে নতুন অঞ্চলগুলোর প্রবেশ’ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শুক্রবার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাড়াহুড়ো করে মঞ্চস্থ গণভোট শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় ইউক্রেনীয় এই চার ভূখণ্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার বলে ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তিনি। দখলকৃত এসব অঞ্চলে রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
অবশ্য ইউক্রেন এবং পশ্চিমা সরকারগুলো এই ভোটকে জাল, অবৈধ এবং অস্ত্রের মুখে পরিচালিত বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে মস্কো বলছে, মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ‘ঐতিহাসিক মাতৃভূমিতে’ ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। আট বছর আগে একইভাবে ক্রিমিয়া দখল করেছিল রাশিয়া।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল তিনটায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়) গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্রাসাদের সেন্ট জর্জ হলে ‘রাশিয়ান ফেডারেশনে নতুন অঞ্চলগুলোর প্রবেশ’ সংক্রান্ত ওই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে। কলামযুক্ত এই হলটির সোনায় খোদাই করা মার্বেল ফলক রাশিয়ান সামরিক বীরদের স্মরণ করে থাকে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার বলেছেন, “নতুন সব ভূখন্ডকে রাশিয়ার অংশ করে নিতে আগামীকাল (শুক্রবার) স্থানীয় সময় দুপুর ৩ টায় (১২:০০জিএমটি) গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসের সেন্ট জর্জ হলে চুক্তি সই অনুষ্ঠান করা হবে।”
“অনুষ্ঠানে রাশিয়া ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে রুশপন্থি দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাশিয়া-নিযুক্ত দুই কর্মকর্তার সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে চুক্তি সই করা হবে।”
এরপর ক্রাইমিয়াসহ রাশিয়ার পার্লামেন্টের দুই কক্ষই আগামী সপ্তাহে এই চুক্তিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করবে। ৪ অক্টোবরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ থেকে ভাষণ দেবেন।
সেই ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জুড়ে নেয়ার সময় যা যা করা হয়েছিল এবারও তেমন পক্রিয়াতেই ইউক্রেনের আরও চার অঞ্চলকে রাশিয়া ফেডারেশনভুক্ত করা হচ্ছে।
রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল বিশ্ব সম্প্রদায় মেনে নেয়নি। এবারও মেনে নেবে না। ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো এবারের চার অঞ্চলের গণভোটকে অবৈধ ও জবরদস্তিমূলক অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, নিজেদের দখল হালাল করতে আইনি মোড়ক দেয়ার জন্যই এই ভোট করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া এই অঞ্চলগুলো নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে পরলে তখন তারা বলতে পারবে যে, ইউক্রেনকে দেয়া পশ্চিমা দেশের অস্ত্র দিয়ে তাদের দেশে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এতে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
ইউক্রেন বলছে, তারা তাদের ভূখণ্ডের কোনও অংশে রাশিয়ার দখলদারিত্ব মেনে নেবে না এবং শেষ রুশ সেনা প্রত্যাহার হওয়া পর্যন্ত লড়বে।
কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলছেন, কিইভের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে চাওয়া অঞ্চল ও এর জনগণকে কখনোই ছেড়ে যাবে না তারা।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে থাকা রুশভাষীদের নির্বিচারে হত্যা ও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষায় এবং রাশিয়াকে ধ্বংসে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করতে এই যুদ্ধ করতে হচ্ছে বলেও ভাষ্য তার।