বাংলাদেশ সরকারের পর্যটন সংক্রান্ত উন্নয়ন পরিকল্পনায় মাস্টারপ্ল্যানে সিলেট দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে পর্যটন সেক্টর থেকে ৪ দশমিক ৩ পার্সেন্ট জিডিপিতে কন্ট্রিবিউট হয়। সরকার চাইছে ২০৩০ সালে এই কন্ট্রিবিউশন ডাবল ডিজিটে (১০) উন্নীত করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিলেটকে রিজিওনাল হাব করতে চাইছেন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর আন্তঃযোগাযোগ ও পর্যটন উন্নয়নে জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভের উপরেই নির্ধারণ হবে পাথর উত্তোলন। পরিবেশের ক্ষতি না করে কতটুকু উত্তোলন করা যায় তা নির্ধারণ করা হবে।
বিশ্ব পর্যটন দিবসকে সামনে রেখে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সিলেটে মানবিক উন্নয়ন সংগঠন ’সম্পর্ক’ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার।
সিলেট জেলা পরিষদের ডিজিটাল সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় সহযোগী ছিল পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’। এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবেসের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’র আলোকে গোলটেবিল আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল- ’সিলেটের পর্যটন, পরিবেশ ও নতুন সম্ভাবনা’।
গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলা গোলটেবিল আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের উদ্যোক্তা উত্তম কুমার সিংহ। সহযোগী হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আশরাফুল কবির।
প্রথম পর্বে পর্যটন ব্রান্ডিংয়ে নতুন পণ্য হিসেবে সিলেটের আদি সংস্কৃতি নৌকার ওপর সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী নির্মিত তথ্যচিত্র ‘বারকি’ প্রদর্শন করা হয়। স্থপতিদের সহযোগিতায় বারকি নৌকাকে ’পর্যটন ব্রান্ড পণ্য’ হিসেবে প্রস্তুত করার কাজে নিবেদিত গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. তাহমিলুর রহমান গোলটেবিল আলোচনায় বিষয়বস্তুর আলোকে বক্তব্য দেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি কৌশিক সাহার সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সহ-সভাপতি আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রাহক ও ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন জাদুঘরের পরিচালক ডা. শাহজামান চৌধুরী বাহার, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, সিলেট উইমেন্স চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হাওর গবেষক মো. এমদাদুল হক এবং লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালি বিভাগের প্রভাষক মো. আব্দুল হালিম।
গোলটেবিলে আমন্ত্রিত আলোচক ছাড়া পর্যটন ও পরিবেশসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোক্তা তরুণ ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। আলোচকেরা অনেকটা মুক্ত মতামতের মতো করে তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সময়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সুযোগ-সুবিধা একইভাবে প্রসারের পক্ষে মতামত দিয়ে বলেছেন, সিলেটে পর্যটনকেন্দ্রগুলো প্রকৃতিনির্ভর। এজন্য এলাকার পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় মানুষজনকে সচেতন করার কাজে মনোযোগ দিতে হবে। পর্যটনের বিকাশে নতুন ভাবনায় প্রাণ-প্রকৃতি ঠিক রেখে আমাদের সব মিলিয়েই কাজ করতে হবে। সিলেটের বনগুলোতে কাঠ চোরাচালান ও পর্যটকদের চলাচলের জন্যে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে প্রকৃতির জন্য নতুন করে ভাবা উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওয়েবসাইট ডেভেলপ এবং ট্যুরিস্টবান্ধব ম্যাপ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেলা ও থানা পর্যায়ে স্থানীয় এলাকার কর্মজীবী মানুষকে পরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করা হবে। বিভাগীয় ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যটন সেল গঠন করা হয়েছে। সকলের সার্বিক সহযোগিতায় সমন্বিতভাবে আমরা পর্যটনের উন্নয়নে কাজ করবো।
আয়োজক সংগঠন ‘সম্পর্ক’ ও ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ সিলেটের প্রাণ। পর্যটনে সিলেটের পরিচিতি ‘প্রকৃতিকন্যা’। প্রাণপ্রকৃতির সুরক্ষা আমাদের পর্যটনকে বিকশিত করবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিকশিত হওয়ার আগে ভাবনায় রাখতে হবে পরিবেশ। সিলেটের পর্যটনশিল্পকে নতুন ভাবনায় এগিয়ে নিতে সুচিন্তিত মতামত ধারণ করে পরবর্তীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে গোলটেবিল আলোচনার মতামতগুলো যেন গুরুত্ব পায়, সেই চেষ্টায় পর্যটনের নতুন সম্ভাবনায় কিছু পদক্ষেপের শুরুতে এই গোলটেবিল আলোচনা করা হয়েছে।