‘চাকরি সরকারি স্কুলে, করেন জমির দালালি ও প্রতারণা’

চাকরি করেন মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। অথচ সমবায় সমিতির মাধ্যমে জমি কেনা-বেচার নামে অভিভাবকদের কাছ হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। শুধু দুজন অভিভাবকের কাছ থেকেই নিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ এস এম জসিম উদ্দিন এবং সহকারী আব্দুস সালাম এই প্রতারণা করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরের আল ফাতিহা নামের একটি সমবায় সমিতির নামে জমি কেনা-বেচার নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ এস এম জসিম উদ্দিন এবং সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম অভিভাবক রাহেনা আক্তার এবং বিবি আয়েশার কাছ থেকে নিয়েছেন মোট ৩০ লাখ টাকা।

আল ফাতিহা নামের সমবায় সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ এস এম জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘জমি না পেলেও টাকা ফেরত পাবেন। যাদের কাছে জমিটি রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করা হয়েছে তারা এখনও টাকা দেননি। তারা টাকা দিলেই সবার টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।’

কবে নাগাদ টাকা ফেরত দেওয়া হবে জানতে চাইলে এ এস এম জসিম উদ্দিন বলেন, কাল জানাতে পারবো কবে নাগাদ টাকা দিতে পারবো। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাসও দিয়ে বলেন, ‘আমরা তো টাকা মেরে খাইনি।’

আল ফাতিহা সমবায় সমিতির কার্যকরী সদস্য ও বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে ভুল নম্বরে কল দিয়েছেন বলে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। পরে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে সমিতি করেছি। নিজের আত্মীয়ের মধ্যে টাকা নিয়েছি। অন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি।’ তবে রাহেনা আক্তার ও বিবি আয়েশার কাছে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।

অভিযোগে জানা গেছে, শিক্ষকতায় ফাঁকি দিয়ে ১০১২ সাল থেকে জমি কেনা-বেচার নামে প্রতারণা করছেন এই দুই শিক্ষক। দীর্ঘদিন জমির জন্য চেষ্টা করেও না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত চান ভুক্তভোগীরা। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেও ২০২০ সাল থেকে ঘুরাতে থাকলে শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে গত ১১ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেন রাহেনা আক্তার।

রাহেনা আক্তার বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে ছয় মাসের সময় নিয়ে জমি দেননি শিক্ষক সহকারী শিক্ষক ও আল ফাতিহা সমবায় সমিতির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক আব্দুস সালাম। আমি ১৪ লাখ এবং আমার নিকটাত্মীয় বিবি আয়েশার আরও ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে। অথচ এখনও জমি রেজিস্ট্রি করেও দেয়নি। আবার টাকাও ফেরত দেয় না। অথচ জমি বিক্রি করেছে অনেক আগেই। আর তারা বলছে যারা কিনেছে তারা টাকা দিলেই দিয়ে দেবো।

রাহেনা আক্তার লিখিত অভিযোগে বলেছেন, টাকা দেওয়ার পর থেকে জমির নামজারিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে রেজিস্ট্রি করে দিতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। আরও শতাধিক লোক তাদের বিশ্বাস করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। বছরের পর বছর নানাভাবে আশ্বাস দিয়েও জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়নি। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগে অভিভাবকদের সঙ্গে নানাভাবে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে অর্থ আয়ের সঙ্গে জড়িত তারা। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সঙ্গেও জড়িত তারা। যা অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।

জানা গেছে, সাভারের হেমায়েতপুরের পাশ ঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম পাড় সংলগ্ন মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ধল্লা মৌজায় চার একরের বেশি নিষ্কণ্টক জমির জন্য এ এস এম জসিম উদ্দিন ও আব্দুস সালাম দুই অভিভাবকের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেন। জমি দিতে না পারায় ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর মিরপুর-১ নম্বরে শাহিন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের তৃতীয় তলায় একটি সাধারণ সভা করে জমি বিক্রি করে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তারা। বৈঠকের পর ৬৭ শতাংশ জমি বেচে দিলেও কোনও টাকা পাননি ভুক্তভোগীরা। বাকি জমিও ‘কিং বিডি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’ নামের একটি অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানকে দখল বুঝিয়ে দিয়ে সমবায়ীদের কোটি হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা করছেন এবং বিভিন্ন উপায়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন ভুক্তভোগীদের।

অভিযোগে জানা গেছে, শিক্ষকতার আড়ালে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে এখনও নানাভাবে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই দুই শিক্ষক। দীর্ঘ দিন ধরে একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কারণে প্রভাব রয়েছে তাদের।

বিদ্যালয়টির নাম প্রকাশে কয়েকজন অভিভাবক জানান, দীর্ঘদিন এক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কারণে তারা শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়ান না। বেশিরভাগ সময় জমির ব্যবসা নিয়ে থাকেন তারা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন