আবাদি জমির পরিমাণ কমছে প্রতিনিয়ত। অথচ ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে হাজার হাজার বিঘা জমি। যার অধিকাংশই থাকছে অনাবাদি। ফলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকির আশঙ্কা করছে সরকার। এ কারণে তিন ফসলি জমি রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ব্যক্তি মালিকানায় ৬০ বিঘার বেশি জমি থাকলে তা বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে প্রণীত হচ্ছে নতুন আইন। যা ইতোমধ্যেই মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ মে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে “ভূমি সংস্কার আইন, ২০২২” -এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইনটির খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তির মালিকানায় ৬০ বিঘার বেশি জমি থাকতে পারবে না। থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করবে সরকার। ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী দেশের কেউ সর্বোচ্চ ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমির মালিক থাকতে চাইলে তাকে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নেওয়ার সময় কী কারণে জমি দরকার, তা যুক্তিসহ উল্লেখ করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬০ বিঘার বেশি জমি রাখার কারণ যুক্তিযুক্ত মনে হলেই অনুমতি পাওয়া যাবে।
আইন বাস্তবায়নে শুরুতেই সারা দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ জন্য নেওয়া জোনিং প্রকল্প শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ব্যক্তিপর্যায়ে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমির মালিকানা গ্রহণ সম্ভব হবে না। এটা হয়ে গেলে সারা দেশেই যে কেউ ইচ্ছা করলেই কিছু করতে পারবে না। তবে তিন ফসলি জমি রেখে এক ফসলি জমির ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা ছাড় দিলেও তা ৬০ বিঘার ওপর জমি গেলেই আর ছাড় নয়, সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক।
আইনে বলা হয়েছে, ৬০ বিঘার ওপর জমির মালিকানা নিতে গেলে সরকারকে জানাতে হবে জমি তার কোন কাজে লাগবে। যুক্তি সরকারের মনোপুত হলে অতিরিক্ত জমি ৫ বছর কিংবা ১০ বছরের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেবে। আইনে বলা আছে, ৬০ বিঘার বেশি জমি নিতে গেলে তা জোনভিত্তিক অনুমতি দেওয়া হবে। জমির ব্যবসা করার জন্য এ অনুমতি দেওয়া হবে না।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের কাছ থেকে জমি নিয়ে তা ফেলে রাখা যাবে না বলেও আইনে বলা রয়েছে। প্রথমে তিন বছরের অনুমতি দেওয়া হবে। এর মধ্যেই জমি ব্যবহার করতে হবে। যদি এর মধ্যে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আরও দুই বছর সময় দেওয়া হবে। কিন্তু ৫ বছরেও যদি জমি অব্যবহৃত থাকে তাহলে সেই অনুমতি বাতিল করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনও মূল্যে দেশের ফসলি জমি রক্ষা করতে হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ৬০ বিঘা পর্যন্ত জমি থাকলে কোনও সমস্যা নেই।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে কোনও জমি উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করতে হবে। যে কোনও শিল্প উদ্যোক্তার শিল্প সম্প্রসারণের জন্য ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি ব্যবহারের অনুমতি চাইলে তা দেওয়া হবে। শিল্পের লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে জমির প্রয়োজন হলে অনুমতি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়।
তবে অতিরিক্ত জমি ব্যবহারের অনুমতি নিতে মন্ত্রণালয়ে এসে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, নতুন আইন অনুযায়ী ৬০ বিঘার বেশি জমি ব্যক্তিমালিকানায় থাকতে পারবে না। এটা আগেও ছিল, কিন্তু এখন আমরা এটাকে বাধ্যতামূলক করবো। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ২নং সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, উদ্যোগটি ভালো। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। কারণ দেশে ভূমিদস্যুর সংখ্যা এবং ক্ষমতা তো অনেক। এ ক্ষেত্রে আইন বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিদের কোনও সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তা করতে সম্মত রয়েছি।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার কৃষক মোহম্মদ কাওছার জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের চরের হাজার হাজার একর জমির মালিক হাতে গোনা কয়েকজন জোতদার। তাদের কাছে থাকা এসব জমি থেকে ৬০ বিঘা রেখে বাকি জমি কোন পদ্ধতিতে সরকার বাজেয়াপ্ত করবে তা বোধগম্য নয়। তবে সিদ্ধান্তটি ভালো বলে জানিয়েছেন তিনি।