সিলেটের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা, সমাজব্রতী ও পাকিস্তান আমলে প্রকাশিত জনশক্তি পত্রিকার সম্পাদক নিকুঞ্জ বিহারী গোস্বামীর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
সোমবার (২৯ আগস্ট) দিনটি উপলক্ষে নগরীর চালিবন্দর এলাকায় তার প্রতিষ্ঠিত উমেশচন্দ্র-নির্মলাবালা ছাত্রাবাস পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন সিলেটের প্রয়াত শিক্ষাব্রতী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নীহার সেনের স্মৃতি রক্ষার্থে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ‘নীহার সেন স্মৃতি বৃত্তি’ প্রদান করা হয়।
দিনের কর্মসূচির শুরুতে ছিল সমবেত গীতাপাঠ, নিকুঞ্জ বিহারী গোস্বামীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য দান। সন্ধ্যায় স্মৃতিতর্পন ও ‘নীহার সেন স্মৃতি বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- সিলেটে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার নীরাজ কুমার জয়সওয়াল।
ছাত্রাবাসের সভাপতি প্রকৌশলী মনোজ বিকাশ দেব রায়ের সভাপতিত্বে আয়োজিত স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সম্পাদক স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ। স্মরণসভায় ছাত্রাবাসের সম্পাদক কৃষ্ণপদ সূত্রধর স্বাগত বক্তব্য দেন।
সভা শেষে ‘নীহার সেন স্মৃতি বৃত্তি’ প্রদান করা হয়। এ বছর চার জন মেধাবী শিক্ষার্থী আড়াই হাজার টাকা বৃত্তি হিসেবে লাভ করেন।
উল্লেখ্য, শ্রীমতী নীহার সেনের জন্ম সিলেট শহরের চালিবন্দর মহল্লায়। তার বাবা স্বর্গীয় শ্রী হেম চন্দ্র সেন চালিবন্দরে অবস্থিত ইন্দেশ্বর টি এন্ড ট্রেডিং কোম্পানির সিলেট হেড অফিসের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ আমল থেকে সুদীর্ঘ ৪৭ বছর ওই কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর কোম্পানিটি শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হওয়ার পর তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
প্রয়াত নীহার সেন সিনিয়র সহ শিক্ষিকা পদে সিলেট অগ্রগামী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ বিন্দুবাসিনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭০ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পদে পদোন্নতি পেয়ে চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রধান শিক্ষিকার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৪ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সহায়ক সমিতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। অবসর জীবনে কারিতাস দিনাজপুরে দীর্ঘকাল রিজিওনাল প্ল্যানিং ও ইভেল্যুয়েশন কমিটির (আরপিইসি) সদস্য ছিলেন।
নীহার সেন বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে কলকাতার ভারত সেবাশ্রম সংঘ হাসপাতালে দীর্ঘ একমাস আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৯৫ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল অনন্তলোকে যাত্রা করেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রেখে যাওয়া সঞ্চিত অর্থ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে তাঁর আত্মীয়-পরিজনরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেন।
ভারতের যে হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সেই ভারত সেবাশ্রমের কলকাতার ডায়মন্ড হারবার রোডের নার্সিং ইনস্টিটিউটের মেয়েদের জন্য, হবিগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম এবং চালিবন্দর উমেশচন্দ্র-নির্মলাবালা ছাত্রাবাসে দুই লক্ষ টাকা করে প্রদানের মাধ্যমে তাঁর শেষ ইচ্ছাপূরণের কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত অর্থ স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা থাকবে এবং বছর শেষে প্রাপ্ত মুনাফার অর্থ বৃত্তি হিসেবে প্রদান করা হবে।