গেজেটেই সীমাবদ্ধ ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর, ধুঁকছে অর্থনীতি

২০১৯ সালে বাংলাদেশ নৌ ও পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সিলেটের ভোলাগঞ্জকে দেশের ২৪তম স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলেও এখনও চলছে শুল্ক স্টেশন হিসেবে। এমনকি তিন বছরেও এখানে স্থলবন্দর দূরের কথা, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টও চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে এ শুল্ক স্টেশন লাগোয়া দেশের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর টানতে পারছে না ভারতীয় পর্যটকদের। এমনকি বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখানকার ব্যবসায়ীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। আর সম্ভাবনা থাকলেও ইমিগ্রেশন সুবিধা না থাকায় ধুঁকছে এ অঞ্চলের অথনীতি।

তবে স্থলবন্দর না হলেও এ শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানিতে যুক্ত আছেন প্রায় সাড়ে তিনশ ব্যবসায়ী। ২০২১ সালে করোনার কারণে কয়েক মাস আমদানি বন্ধ থাকলেও এখানে রাজস্ব আদারে লক্ষ্যমাত্রা ২৯ লাখ টাকার বদলে হয়েছে ৫৪ লাখ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশন পার হলেই ভারতের মেঘালয়। এখান থেকে চেরাপুঞ্জির দূরত্ব মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার। কিন্তু ইমিগ্রশন সুবিধা না থাকায় তাদের ঘুরতে হয় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পথ।

ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, সরাসরি ভারতের ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করতে হলে আমাদের এখানকার ব্যবসায়ীদের প্রথমে যেতে হয় তামাবিল। পরে সেখান থেকে পাহাড়ি দুর্গম পথে যেতে হয় চেরাপুঞ্জি। সব মিলিয়ে দূরত্ব দাঁড়ায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। এতে সময় লাগে প্রায় এক দিন। টাকাও বেশি খরচ হয়। কিন্তু ভোলাগঞ্জে ইমিগ্রেশন থাকলে মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ যাওয়া লাগতো। তিন ঘণ্টার মধ্যে একজন ব্যবসায়ী তার কাজ শেষ করে কম খরচে আবার চলে আসতে পারতেন। এতে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতো, সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ত।

তিনি আরও বলেন, এখানে স্থলবন্দর করার কথা। কিন্তু এখনও কোন কিছুই হয়নি। এছাড়া কেবল বাংলাদেশ থেকে একটি স্থলবন্দর করলেই হবে না। ওপারে (ভারত অংশে) রাস্তাসহ অনেক কিছুর উন্নয়ন লাগবে। তারপর স্থলবন্দরের সুফল মিলবে। সে হিসেবে এ সবকিছু সম্পন্ন করে এটি চালু করতে অনেক দেরি হবে। আপাতত আমাদের দাবি, এখানে ইমিগ্রেশন সুবিধাটা চালু করা হোক।

অপরদিকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, এখানে ইমিগ্রেশন চালু হলে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বাড়বে পর্যটক।

সাদাপাথর এলাকার ব্যবসায়ী কবির আহমদ বলেন, পর্যটকরা সবসময় চান কম খরচে এবং কম সময়ে বেশি জায়গা ঘুরতে। তাই এখানে ইমিগ্রেশন থাকলে দেশের যেসব পর্যটক চেরাপুঞ্জি ঘুরতে যেতে চান তারা প্রথমে সাদাপাথরে এসে পরে সহজেই ভারতে যেতে পারবেন। তাছাড়া চেরাপুঞ্জি থেকে যেহেতু সাদাপাথরের দূরত্ব মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার, সুতরাং ইমিগ্রেশন সুবিধায় সাদাপাথরে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়বে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের যেসব বাসিন্দা চেরাপুঞ্জিতে আসেন, তাদের ভিসা থাকলে তারাও সাদাপাথরে আসার সুযোগ থাকে।

এদিকে সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম এখানকার ইমিগ্রেশন সুবিধার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ইমিগ্রেশন চালুর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন উল্লেখ করে একাধিক গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর চালুর জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। স্থলবন্দর হলে ইমিগ্রেশন সুবিধাও হবে।