ভারতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে ‘টমেটো ফ্লু’। বিজ্ঞানীদের ধারণা- এটি হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজের (এইচএফএমডি) একটি ধরন হতে পারে। করোনা , ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার কিছু লক্ষণের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। দেশেও সম্প্রতি বেড়েছে শিশুদের এইচএফএমডি। লক্ষণ –উপসর্গ একই হলেও তা ‘টমেটো ফ্লু’ কিনা তা এখনও জানে না কেউ। তবে চিকিৎসকরা একে এইচএফএমডিই বলছেন। আর এ নিয়ে শঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা, এই রোগের ওষুধ না থাকলেও ৭ দিনে নিরাময়যোগ্য বলে জানান তারা।
টমেটো ফ্লু কী?
ভারতের কেরালার কল্লাম প্রদেশে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে টমেটো ফ্লুতে আক্রান্ত একজন শনাক্ত হন। কেরালার পর উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু এবং হরিয়ানাতেও রোগটি শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক রোগী পাওয়া গেছে যাদের বেশিরভাগই এক থেকে নয় বছরের শিশু।
টমেটোর মতো ফুসকুড়ি দেখা দেয় বলে স্থানীয়রা এর নাম টমেটো ফ্লু রেখেছে। চিকিৎসা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যানসেটে বলা হয়েছে এই রোগে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর দেখা দেয়, সঙ্গে গলায় ব্যথা, ক্লান্তি ও খাবারে অরুচি হয়। এর দুই থেকে তিনদিন পর শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে হাত, পা, মুখের ভেতরে, জিহ্বা, দাঁতের মাড়িতে লাল রঙের র্যাশের মতো দেখা দেয়। সেগুলো এক পর্যায়ে বেশ বড় হয়ে ওঠে এবং ফেটে গিয়ে ফুসকুড়ি থেকে তরল ঝরতে থাকে। হাত এবং পায়ে ফুসকুড়িগুলো বেশি হয়ে থাকে। টমেটো ফ্লু’র র্যাশে ব্যথা হয়ে থাকে। এটি অধিকতর ছোঁয়াচে।
এইচএফএমডি কী
ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ শিশুদের ভাইরাসজনিত একটি জটিল সংক্রামক রোগ। ‘কক্সাকি’ ভাইরাসের কারণে এ রোগ হয়। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় এতে। কেউ যদি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যায় এবং তার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তবে সেও এতে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ মূলত ফিকো-ওরাল রুট, নাকের পানি, থুথু ও কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। হাত ও পায়ের র্যাশ হলে সেটার সংস্পর্শেও ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির জামা কাপড়, গ্লাস ব্যবহার করলেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
উপসর্গ কেমন
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৩-৬ দিনের মধ্যে ১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর আসতে পারে। জ্বর আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গলায় ব্যথা শুরু হবে, খাওয়ার রুচি কমে যাবে, ক্লান্তি ভর করবে। গলাব্যথার কারণে শিশু কিছু খেতে চাইবে না। তখন পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে। গলাব্যথার পাশাপাশি মুখ গহ্বরের ভেতর ছোট ছোট সাদা আকৃতির ফুসকুড়ি দেখা দেবে, ঠোঁটের আশেপাশে র্যাশ দেখা দেবে। র্যাশগুলো কিছুটা যন্ত্রণাদায়ক হবে আবার র্যাশগুলোতে চুলকানিও থাকতে পারে। জ্বর হওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে হাত ও পায়েও র্যাশ দেখা দেবে। হাত, পা ও মুখ আক্রান্ত হওয়ার কারণে এই রোগকে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ বলে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (শিশুপুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র) অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, শিশুদের এই রোগটি অহরহ হচ্ছে। কক্সাকি ভাইরাস দ্বারা এটি হাতে পায়ে, মুখের ভিতরে সংক্রমিত হয়। প্রথমে জ্বর আসে এরপর ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এটি শিশুদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা দেয়। এটি সাত থেকে ১০ দিনে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিরাময়যোগ্য রোগ এটি।
তিনি আরও বলেন, ইদানিং অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে পরিসংখ্যান বলা খুব মুশকিল। এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শিশুদের মুখে যদি হয় হালকা গরম পানি দিয়ে গারগল করবে।
সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চের সিইও ডা ইসমাইল আজহারি বলেন, যেহেতু এটা ভাইরাসজনিত রোগ তাই এটি ৭-১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। শিশু যদি ঠিকমতো খেতে পারে, তবে তেমন একটা চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন পর্যাপ্ত নিউট্রিশন পায় এবং কোনওভাবেই যেন পানিশূন্যতায় না পড়ে।