হবিগঞ্জে চা শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চলমান আন্দোলনে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকছেন চা শ্রমিকরা।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের হলরুমে চা শ্রমিকদের সাথে প্রশাসনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে চা শ্রমিক ও পঞ্চায়েত নেতারা বলেন, প্রশাসন যা-ই বলুক না কেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করি না। তিনি যা বলবেন আমরা তাই শুনবো।
নিজেদের দাবি পূরণে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জানিয়ে শ্রমিক নেতারা বলেন, কারও ওপর আমাদের বিশ্বাস নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে মা বলে ডাকি। তিনি একটা কথা বলুক, আমরা কাজে ফিরে যাব।
তারা বলেন, গত ১৯ মাস ধরে চা-বাগানের মালিকপক্ষ আমাদের বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে টালবাহানা করেছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে আমরা না খেয়ে দিন পার করছি। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আন্দোলন এখন আমাদের হাতের মুঠোয় নেই। সাধারণ শ্রমিকদের হাতে চলে গেছে। কারণ বিগত দিনে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আমাদেরকে মাঠে নামিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছে। শ্রমিকরা দাবি আদায়ে প্রয়োজনে রাস্তায় পড়ে থাকব। গুলি করে আমাদের মেরে ফেলুন। আমাদের দাবি আদায় না হলে কাজে ফিরব না।
বৈঠক চলাকালে চা শ্রমিকরা একবার হলরুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আবার তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হয়।
প্রশাসনের লোকজন শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে আশ্বাস প্রদানের চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে শ্রমিকরা অতীতের বিভিন্ন উদাহরণ টেনে এসব আশ্বাসকে তারা বিশ্বাস করেন না বলে জানিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু চৌধুরী, পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর, চুনারুঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক, মাধবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম, চুনারুঘাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বুধবার ১৬তম দিনের মতো হবিগঞ্জের ২৪টি চা-বাগানে কর্মবিরতি পালন করেছেন শ্রমিকরা। সকালে বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা চান্দপুর ফ্যাক্টরির সামনে এসে জড়ো হন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ২৪টি বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন। প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠক শেষ হয় কোনো সমাধান ছাড়াই।
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতেগত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের চা শ্রমিকরা। ৯ আগস্ট থেকে ৪ দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর গত ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও তা সমাধান হয়নি। আন্দোলনরত শ্রমিকরা দুইদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কও অবরোধ করেন।