অবশেষে ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চা শ্রমিক নেতারা। পরে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেবেন এমন নিশ্চয়তার পর শ্রমিক নেতারা তাদের টানা ৯ দিনের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। তবে অধিকাংশ চা বাগানের চা শ্রমিকরায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিক নেতাদের এ সিদ্ধান্তকে সম্মতি জানায়নি বলে জানা গেছে।এমন বাস্তবতায় কাজে ফিরবেন কি না তা নিয়ে চলছে অভ্যন্তরীণ আলোচনা।
সাধারণ চা শ্রমিকরা অভিযোগ, দাবি পুরন হওয়ার আগে গোপন আঁতাতের মাধ্যমেই চা শ্রমিক নেতারা কাজে ফেরার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, বারবার আলোচনা করে সমাধানে আসতে না পারার মূলে রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সাথে সাধারণ শ্রমিকদের আস্থার সংকট। এই দূরত্ব না কমালে সংকট নিরসন সম্ভব নয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে তাদের সাথে মজুরি নিয়ে আলোচনায় বসবেন; এমন আশ্বাসে কাজে যোগ দিচ্ছে সিলেটের লাক্কাতুরা সহ দু-একটি বাগানের চা শ্রমিকেরা।
জানা যায়, চা শ্রমিকদের উদ্ভূত শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রোববার দিনগত রাত ৯টায় চা শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে চা শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়— চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আপাতত পূর্বের ১২০ টাকা মজুরি চলমান রেখে সোমবার থেকে কাজে যোগদান করবেন।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্তভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এ সময় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আসন্ন দুর্গাপূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স সংযুক্ত হতে আবেদন করেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারের মাধ্যমে দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানা হবে বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালন্দি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
১২০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকরা প্রথম চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে টানা ধর্মঘটের আলটিমেটাম দেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় শ্রমিকরা গত ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন।
গত ২০ আগস্ট শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে এক বৈঠকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ১৪৫ টাকা মজুরি প্রথমে মেনে নেন। পরে মাঠপর্যায়ে সাধারণ শ্রমিকরা ১৪৫ টাকা না মেনে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।
এ ব্যাপারে জানতে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালীর সাংগঠনিক সম্পাদক নিপেন পাল ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরার সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি।
এমনকি এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানার জন্য শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলামকে একাধিবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরিশেষে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের অফিসিয়াল ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।