বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চার খুনি—নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম ও আব্দুর রশিদ এখনও পলাতক। এদের সবাইকে ফেরত আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এজন্য সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে নুর চৌধুরী রয়েছে কানাডায়। রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের ফেরত আনার জন্য ওই দেশের সরকার ও বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে সরকার।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সারা বছরই এ নিয়ে কাজ করছে। আগস্ট মাস এলেই সবাই মনে করে বিষয়টি তেমন নয়। আমরা সবসময় চেষ্টা করে যাবো তাদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি দিতে।’
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাশেদ চৌধুরী ও কানাডায় অবস্থানরত নুর চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য ওই দেশগুলোতে আমাদের দূতাবাস পুরো বছর ধরে কাজ করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে যখনই কোনও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গেছে বা ওইসব দেশ থেকে যারা এসেছে, তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
বাংলাদেশের মূল যুক্তি
খুনিদের ফেরত আনার জন্য ওই দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু যুক্তি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের মূল পয়েন্ট হচ্ছে এ ধরনের আত্মস্বীকৃত খুনিরা কীভাবে আইনের আশ্রয় নিয়ে বা আইনের ফাঁকফোকর গলে ওই দেশে থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরী
রাশেদ চৌধুরীর মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট পুনরায় বিবেচনা করছে। ২০১৯ সালের ১৭ জুন এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিল বিভাগকে রাশেদ চৌধুরীর মামলাটি পুনর্বিবেচনার নোটিশ প্রদান করেন তৎকালীন রিপাবলিকান মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য এর সঙ্গে জড়িত সব পক্ষ এবং অন্যান্য বিজ্ঞ আইনজীবীর কাছে মতামত চেয়েছেন তিনি। তিন দফা সময় বৃদ্ধির পর ওই বছর ১৫ অক্টোবর মতামত জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট সরকার রয়েছে। এ কারণে বিষয়টির গুরুত্ব মার্কিন সরকারের কাছে কমে গেছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই মামলাটি এখন তাদের কাছে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। আগে বেশি ছিল বা কম ছিল—এমন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে তাদের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বেশি ব্যস্ত। ওই বিষয়গুলো এই মামলাটিকে প্রভাবিত করছে কিনা সেটি বলা মুশকিল।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনেক বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কোভিডের কারণে যোগাযোগ কিছুটা কম হয়েছিল কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জানুয়ারি থেকে অনেক বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। যেহেতু বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে সেজন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয় এটি নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস কাজ করছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।
গত কয়েক মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা, সংসদীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছে। তারা রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
তিনি বলেন, এটি বলাই বাহুল্য যে রাশেদ চৌধুরীকে যদি তারা ফেরত পাঠায়, তবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এর আগেও একজন বঙ্গবন্ধু খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। সর্বশেষ পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে কী কাজ হয়েছে সেটি এখনও আমাদের জানানো হয়নি।
নুর চৌধুরী
কানাডাতে বাংলাদেশের আইনি প্রতিষ্ঠান নুর চৌধুরীকে নিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সে একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। কানাডায় মৃত্যুদণ্ড না থাকায় একটি টেকনিক্যাল সমস্যা রয়েছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দূতাবাস কানাডা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে আছে। আমরা জানি সে কোন প্রদেশে আছে। সেখানে বাংলাদেশিরা উদ্যোগী হয়ে কানাডার সরকার এবং কোর্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও প্রযোজ্য। যেহেতু তারা ওই দেশগুলোর ভোটার, সুতরাং তারাও বিষয়টি জানতে চাইতে পারেন। তারা জানতে চাইতে পারেন এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধী কীভাবে তাদের দেশে থাকছে। তাদের কেন নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না।
ডালিম ও রশীদ
এদের বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিভিন্ন সময়ে খবর আসে অমুক জায়গায় থাকতে পারে বা অমুক জায়গায় সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেছে। তখন আমরা ওই দেশে যদি দূতাবাস নাও থাকে, নিকটস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে তথ্যগুলো আমরা খতিয়ে দেখি। এখন পর্যন্ত আমরা কোনও তথ্যের সত্যতা পাইনি। কোনও তথ্য আমরা উপেক্ষাও করিনি।