অবিলম্বে ২০২১-২২ সালের চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৩০০ টাকা করার আন্দোলনের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রোববার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফেডারেশনের আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য প্রসেনজিৎ রুদ্র’র পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড উজ্জ্বল রায়। আরও বক্তব্য দেন জিতু সেন, চা শ্রমিক নেতা বীরেন সিং, অজিত রায়, নমিতা রায়, হৃদয় লোহার, নির্মাণ শ্রমিক নেতা রাজন দাস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, চা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির জন্য প্রতি ২ বছর অন্তর মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন হয়। এই চুক্তি নিয়ে সবসময় মালিকপক্ষ টালবাহানা করে। দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থাকাকালীন সময়ে প্রায় তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর অনেক ছলচাতুরির মাধ্যমে মজুরি মাত্র ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেই ২০১৯-২০ সালের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়েছে ১৭ মাস আগে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ সালের চুক্তির কোনো উদ্যোগ নেয়নি মালিকপক্ষ। চুক্তি দেরিতে হলে স্থায়ী শ্রমিক এরিয়ার বিল পেলেও অস্থায়ী শ্রমিকরা তা পান না। ২০২১ সালে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক গেজেট করে এই মেয়াদসীমা ৩ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছিল অগণতান্ত্রিকভাবে। আমরা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনকে সাথে নিয়ে এর প্রতিবাদ করেছিলাম। ফলে তা বাস্তবায়ন হয়নি সেই সময়। এভাবে সময়ক্ষেপন করে শ্রমিক ঠকানো হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন চা শ্রমিকরা।
তারা বলেন, চা শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি দাবি করছেন ৩০০ টাকা। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সব সেক্টরের শ্রমিকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। চা-বাগানের ক্ষেত্রে অবস্থা আরও অমানবিক, নাজুক। বর্তমান বাজারের সাথে চা শ্রমিকদের এই মজুরি গ্রহণযোগ্য তো নয়ই, বরং অযৌক্তিক ও অন্যায়। শ্রমিকদের দাবি করা ৩০০ টাকা সমর্থন করে আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তা ৫০০ টাকা করার দাবি জানাচ্ছি। কারণ আমরা বিভিন্ন সময় বলেছি, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে শ্রমিক পরিবারের নুন্যতম শারীরিক চাহিদা পূরণ, জীবনযাত্রার খরচ, চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষা, পোশাকসহ আনুসাঙ্গিক খরচ ইত্যাদি বিচার-বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিউট হিসেব করে দেখিয়েছেন ৫ সদস্যের একটি পরিবারের নুন্যতম খাবারের জন্য ৬২৫ টাকা দরকার হয়। যা বর্তমান জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আরও বেড়েছে। চা-বাগানের সার্বিক দিক বিবেচনা করলে একটি পরিবার ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি ছাড়া নূন্যতম মানবিক জীবনযাপন করতে পারে না। তাই সেই প্রেক্ষাপটে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। কিন্তু মালিকপক্ষ বিভিন্ন গোঁজামিল ও ফাঁকির হিসাব দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করছে।
বক্তারা লড়াকু চা শ্রমিকদের এই আন্দোলন আপসহীন মানসিকতায় শক্তিশালী করার আহ্বান জানান এবং তাদের এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে ২০২১-২০২২ সালের চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারেরে প্রতি আহ্বান জানান।