সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার পাশে নরজুল নদীর পাশে খোলা মাঠে অস্থায়ীভাবে ২০টি বেদে পরিবারে ৬০জন মানুষের বসবাস। কাঠফাটা রোদ আর তীব্র ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস তাদের জীবন। দুপুর বেলায় কাঠফাটা রোদের তাপে প্রাণটা দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা। বেদে পরিবারে জন্ম নেয়াই যেন তাদের আজন্ম পাপ।
শুক্রবার (১২ আগষ্ট) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুঃখ ও কষ্ট গাঁথা জীবনের কাহিনি। সাদামাটা জীবনযাপন তাদের। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে প্রতিটি দিন তারা কাটায়। একটু সুখের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কঠোর পরিশ্রম করে। এরা রহস্যময় মানুষ। যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায় এখানে-ওখানে। স্থানভেদে তাদের একেক নাম, আর বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন পেশা। বেদেদের বাহন নৌকা। নৌকায় সংসার আবার নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন জায়গায়। যাযাবর বলেই এদের জীবন বৈচিত্র্যময়। বেদেরা জীবনকে একঘরে রাখতে চায় না, প্রকৃতির ভালোবাসাকে স্বীকার করে নেয়।
তাদের জীবন যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে, বেদে কন্যা সুমতেরা বেগম ও সাথি বেগম জানান, স্বামীদের আঁচলে বেঁধে রাখার রহস্য। পুরুষ বশে রাখতে তারা শরীরে সাপের চর্বি দিয়ে তৈরি তেল ব্যবহার করে। তাদের বিশ্বাস এতে স্বামীরা তাদের ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাবে না। তারা আরও জানালেন, তারা দিনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য পেশা পরিবর্তনের সুযোগ করে দিতে পারলে এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে পারে বেদে সম্প্রদায়। তাবিজ-কবজ বিক্রি আর সাপ খেলা দেখিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে হয় ছিন্নমূল, অসহায় বেদে সম্প্রদায়কে। তারা রাস্তার পাশে, ফাঁকা মাঠে বা পরিত্যক্ত জমি, খাসজমি, রাস্তার ধার, স্কুলের মাঠের পাশে অথবা নদীর তীরে অতিথি পাখির মতো অস্থায়ী আবাস গড়ে। আবার একদিন উধাও হয়ে যায়, কেউ খবর রাখে না তাদের। এর মধ্যে অনেক ভোটার রয়েছে কিন্তু অভিযোগ করে বলেন নাগরিক সেবা তারা বঞ্চিত।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলার সমাজসেবা অফিসার বিলাল হোসেন জানান, বেদে সম্পাদয়ের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনে কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে জমিসহ ঘর দিচ্ছেন সরকার। সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাতা রয়েছে। ছেলে মেয়েদের জন্য উপবৃত্তির বরাদ্ধ থাকে, যা আমরা প্রতি বছর দিয়ে থাকি। সরকার চেষ্টা করছেন বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে। আমরা চেষ্টা করবো আমাদের উপজেলা এই কার্যক্রম চালু করার।