দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেশকে বাসযোগ্য করতে হলে এখনই দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার। একটি কার্যকর জাতীয়ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
শনিবার (৬ অগাস্ট) সিলেটের অভিজাত একটি হোটেল মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত আঞ্চলিক মতবিনিময় সভায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন।
ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতি এবং এই দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই)- এর সহায়তায় এই মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সুবীর দাস এবং গবেষনা সহযোগী আব্দুল্লাহ আল জাফরী।
আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন উদ্যোক্তা বলেন, একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে প্রথমেই কমপক্ষে ১২ ধরনের অনুমতি পত্রের প্রয়োজন পড়ে। এ ধরণের পত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারী অফিসগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দরুণ প্রথমেই একজন ব্যবসায়ী নিরুৎসাহী হয় উঠেন।
দুর্নীতির মাত্রা তুলে ধরতে গিয়ে উদ্যোক্তারা বলেন, এমনও নজির আছে যে সরকারী ট্যাক্স অফিসাররা টার্গেট নিয়ে আসেন যে পরবর্তী ৩ মাসে তিনি এই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করবেন। কোভিডকালিন সময়ে বহু নারী উদ্যাোক্তা উঠে এসেছে যাদের সহযোগিতায় সরকার বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করলেও তা মধ্যপন্থী কিছু গ্রুপের প্রভাবে সঠিক হাতে যাচ্ছেনা। সমসায়ীক বন্যার কথা তুলে ধরে অনেকে বলেন, বন্যার কারনে সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার বা সংগঠনগুলো থেকে খুব একটা সহায়তা পাওয়া যায় নি।
নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীক সংগঠনগুলো চাইলেই দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে কিন্তু রাজনীতিকরণের ফলে এসকল সংগঠনের ভূমিকা প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কোনো ধরণের দুর্নীতি বা ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা বলতে গেলেই অনেকে মনে করেন এটি সরকার বিরোধী কাজ, যার ফলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারী কর্মকর্তাদের বিশেষ করে কর-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গণমাধ্যমগুলোও কথা বলার সাহস করেন না, কারণ এসকল গণমাধ্যম কোন না কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়।
আলোচনায় অংশ নেয়া উদ্যোক্তারা ব্রিটিশ আমলে প্রণীত দুর্নীতি প্রতিরোধী আইনগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেন। বলেন, ভ্যাট ও ট্যাক্স নির্ধারনে সরকারকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রণীত ‘তথ্য অধিকারের আইনের’ মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তার প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আবেদন করতে পারেন বলে উপস্থিত একজন বক্তা সুপারিশ করেন।
দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবসায়ীক একটি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, এসকল সংগঠনের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি নিজে দুর্নীতিমুক্ত। পাশাপাশি এসকল সংগঠনগুলোকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করতে না পারলে এর প্রধান যে উদ্দেশ্য তা বাস্তবায়ন করা কখনই সম্ভব না।