খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬ জাহাজ ইউক্রেন ছাড়ার অপেক্ষায়

অবশেষে ইউক্রেনের বন্দর দিয়ে শস্য রপ্তানি শুরু হতে চলেছে। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬টি জাহাজ। তবে হামলার ভয় এসব জাহাজের যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

রুশ বাহিনীর আচমকা হামলা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে অপেক্ষায় থাকা জাহাজগুলো যে কোনো সময় আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে যাত্রা করতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।

রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেন থেকে গমসহ খাদ্যপণ্য রপ্তানি। এতে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে অনেক দেশই।

তবে এ মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট সমাধানে প্রতীক্ষিত এক চুক্তিতে পৌঁছায় রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই চুক্তির আওতায় কৃষ্ণ সাগরে অবরোধ শিথিল করেছে রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানির পথে আর কোনো বাধা নেই।

চুক্তিতে এসব কথা থাকলেও বাস্তবে যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে আগের মতোই ভয়াবহত গ্রাস করে আছে ইউক্রেনকে। এরই মধ্যে কারাগারে যুদ্ধবন্দিদের হত্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট। শনিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে অর্ধশত বন্দি হত্যার অভিযোগ উঠলে তা অস্বীকার করেছে দেশটি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির কার্যালয় জানিয়েছে, খাদ্যশস্য নিয়ে ওইসব জাহাজ যে কোনো সময় রওনা হতে পারে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ জুলাই জাতিংঘের তত্ত্বাবধানে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সবমিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য পাঠানো হবে ইউক্রেন থেকে।

এসব খাদ্যশস্য যাবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাহাজগুলোর জন্য নিরাপদ চ্যানেল নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার ওডেসার চেরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। খাদ্যশস্য বহনের দায়িত্বে থাকা নাবিকদের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো খাদ্যশস্য নিয়ে দেশ ছাড়ছে জাহাজ।
ইউক্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় খাদ্যশস্য বোঝাই ১৬ জাহাজ

তবে প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করার পরও অনিশ্চয়তায় বন্দর ছাড়ছে না জাহাজগুলো। পানিতে হামলার সম্ভাবনা এবং নাবিকরা আহত ও নিহত হতে পারেন ভেবে এখনও জাহাজগুলোকে যাত্রা করাতে ভয় পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পর পরই ইউক্রেন উপকূলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া নৌ অবরোধ দিলে মুখ থুবড়ে পড়ে ইউক্রেনের রপ্তানি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজে খাদ্যশস্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে এসব জাহাজ রওনা হতে না পারলে খাদ্য সংকেটে ভোগা দেশগুলো আরও দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে পারে।

খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দু দেশের হওয়া চুক্তিটি ১২০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। চুক্তির মেয়াদ আরও আলোচনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে পারে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।

ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে। যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।