পুকুরে হঠাৎ সুড়ঙ্গ, উধাও পানি ও মাছ

বগুড়ার কাহালুতে বহু পুরোনো একটি পুকুরের তলে সুড়ঙ্গ সৃষ্টি হয়ে সব পানি উধাও হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে উধাও হয়েছে চাষ করা কয়েক লাখ টাকার মাছ। সেই মাছ ও পানি কোথায় গেছে তা কেউ বলতে পারছেন না।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেলে কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পশ্চিমপাড়া গ্রামে এমনই ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ওই পুকুরে মাছ চাষ করছিলেন নুরুল ইসলাম (৮০)। ১৭ শতক আয়তনের ওই পুকুরে এবারও প্রায় ২০০ কেজি মাছ ছাড়া হয়েছিল। সেই মাছসহ গলাসমান পানি নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর পুকুরের মাঝ বরাবর দেখা মিলেছে একটি সুড়ঙ্গের। এনিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে গেছে। দলে দলে লোকজন ছুটছেন পুকুরটি দেখতে।

সমতল এলাকায় এমন ঘটনা বিরল বলছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষকরা। তাদের মতে, পাহাড়ি অঞ্চল বা খনি এলাকায় এমনটি হলেও সমতল এলাকায় এমন ঘটনা তেমন ঘটে না। এটিকে ‘সিঙ্ক হোল’ বলা হয়। বিষয়টি ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের খতিয়ে দেখা দরকার বলে অভিমত তাদের।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ ও শিশুরা দলবেঁধে দেখতে এসেছেন পুকুরটি। অনেকে কাদা মাড়িয়ে নিচে নেমে উঁকি দিয়ে দেখছেন সুড়ঙ্গের গভীরতা।

পুকুরের মালিক নুরুল ইসলাম পাশেই ছিলেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পুকুরে মাছচাষ করছেন। এবারও ২০০ কেজি মাছ ছেড়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকেলে হঠাৎই পুকুরের মাঝ বরাবর পানিতে বুদবুদ উঠতে দেখেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে হয়তো এমনটি হচ্ছে ভেবেছিলেন তিনি। শুক্রবার থেকে সেই বুদবুদ বাড়তে শুরু করে। সোমবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের পানি ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু হয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করে। এনিয়ে এলাকায় অনেকটা আতঙ্ক দেখা দেয়। পানির এই লাফালাফি দেখতে এলাকার মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন।

‘সন্ধ্যার পর সেই অবস্থা কিছুটা কমে যায়। এরপর পুকুরের পানি পরের দিন বিকেলে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করে। পুকুরের মাঝখানে পাক খেতে খেতে পানি নামতে শুরু করে। নিমিষেই গলাসমান পানি নেই হয়ে যায়।’

নুরুল ইসলাম বলেন, এমনকি কোনো মাছের ছিটেফোঁটাও ছিল না ওপরে। পানি নেমে যাওয়ার পর তারা দেখতে পান পুকুরের মাঝ বরাবরে একটি বিশাল গর্ত। পরে নেমে দেখেছেন প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর সেই গর্ত। এতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ শেষ হয়ে গেছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও পাইকড় ইউনিয়নের সদস্য হারুনুর রশিদ জানান, প্রায় ২০ বছর আগে ওই পুকুর থেকে বালু তুলে বাড়ি করেছেন নুরুল ইসলাম। তার ধারণা, এ কারণে সেখানে ধস দেখা দিয়ে এমনটি হয়েছে।

তবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বালু উত্তোলনের পর কয়েক দফা পুকুরটি খনন করা হয়েছে। তখন সেখানে এমন কোনো লক্ষণই ছিল না।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তুরস্কসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমন ঘটনার নজির আছে। পাহাড়ি অঞ্চল বা খনি এলাকায় ‘সিঙ্ক হোল’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সমতল এলাকায় এটি খুবই বিরল।

অধ্যাপক আব্দুল হাই বলেন, ‘ভূগর্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি, বালু বা খনিজ পদার্থ উত্তোলন করলে নিচের স্তরে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, সেই শূন্যতা পূরণের জন্যই এমন সুড়ঙ্গ বা গর্ত তৈরি হয়। এটি যেহেতু সমতল এলাকায় হয়েছে, এ কারণে এটি ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের খতিয়ে দেখা উচিত যে হঠাৎ এমনটি কেন হলো। সেখানে ভূগর্ভে কোনো স্তরের সমস্যা থেকে এটি হয়েছে? নাকি অন্য কোনো কারণে, তা অবশ্যই অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা বলেন, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।