বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিষণ্ণতা এবং মানসিক চাপে ভোগা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপ সংস্থা গ্যালাপ বিশ্বের ১২২টি দেশের এক লাখের বেশি মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে সোমবার (৪ জুলাই) এই ফল প্রকাশ করেছে।
সাম্প্রতিক এক বৈশ্বিক জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিষণ্ণতা এবং মানসিক চাপে ভোগা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। গ্যালাপের প্রকাশিত “২০২২ গ্লোবাল ইমোশন রিপোর্ট” শীর্ষক প্রতিবেদনে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৫।
তালিকায় সবার ওপরে ছিল আফগানিস্তান। সূচকে ৫৯ স্কোর নিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি এক নম্বর স্থান দখল করে আছে। দেশটি মানসিক চাপে ভোগার দিক থেকেও ৩২ স্কোর নিয়ে সবার ওপরে।
গ্যালাপ বলছে, নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সূচকে যে দেশের স্কোর যত বেশি, সেই দেশের জনগণের বেশির ভাগই এসব আবেগের মুখোমুখি হয়েছেন। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গত ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট এক হাজার মানুষ সরাসরি এই জরিপে অংশ নেন।
তবে বিশ্বজুড়ে এই জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন ১২২টি দেশের এক লাখ ২৭ হাজার মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতে, ২০২০ সালের তুলনায় গত বছরটি তাদের কাছে বেশি চাপের ছিল।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা শারীরিক ব্যথা, উদ্বেগ, দুঃখ, রাগ এবং চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন কিনা সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল। গ্যালাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন ক্লিফটন বলেছেন, বিশ্ব এখন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি এবং করোনাভাইরাসের মতো এক মহামারিতে ভুগছে।
এসবের যেকোনও একটিই বিশ্বকে আরো ভয়াবহ খারাপ করে তুলতে পারে। তবে এসব সংকট শিরোনামে আসার অনেক আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে অশান্তি বেড়েছে। গ্যালাপের এই প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, মূলত এক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে অসুখী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৪২ শতাংশ বলেছেন, তারা অনেক বেশি উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই উদ্বেগের পরিমাণ ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর প্রায় দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন এত বেশিসংখ্যক মানুষের মাঝে নজিরবিহীন নেতিবাচক আবেগ দেখা যাচ্ছে সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ভাবতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মানুষের অসুখী হয়ে ওঠার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে অসুখী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সংকট অবদান রেখেছে- দারিদ্র্য, ত্রুটিপূর্ণ সম্প্রদায়, ক্ষুধা, একাকীত্ব এবং ভালো কাজের অভাব।
এতে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের বেশি (৩১ শতাংশ) মানুষ বলেছেন, তারা অনেক বেশি শারীরিক ব্যথার মুখোমুখি হয়েছেন। এছাড়া চারজনের মধ্যে একজন দুঃখ এবং কিছুটা কম রাগের মুখোমুখি হয়েছেন।
অন্যদিকে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চাপ অনুভব করেন আফগানিস্তানের জনগণ। দেশটির নেতিবাচক সূচক স্কোর ৩২; যা ১৬ বছর আগে গ্যালাপের জরিপ শুরু করার পর থেকে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, ইতিবাচক সূচক স্কোর ৮৫ পেয়ে সবচেয়ে কম চাপের দেশ নির্বাচিত হয়েছে পানামা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে কিছুটা দুঃখ, উদ্বেগ এবং চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে লোকজন সেই তুলনায় কিছুটা কম রাগান্বিত ছিলেন।
গ্যালাপের পজিটিভ ইমোশনস সূচকে সর্বোচ্চ ৮৫ স্কোর নিয়ে শীর্ষে আছে পানামা। এছাড়া পজিটিভ ইমোশনস সূচকে ইন্দোনেশিয়া ও প্যারাগুয়ে যৌথভাবে ৮৪ স্কোর পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
পাশাপাশি ইতিবাচক আবেগের এই তালিকায় এল সালভাদর, নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাসও যৌথভাবে ৮২ স্কোর নিয়ে তৃতীয় এবং আইসল্যান্ড, ফিলিপাইন ও সেনেগাল ৮১ স্কোর পেয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।