গত দুই মাসে টানা তিনবার বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট বিভাগ। বিশেষ করে তৃতীয় দফা বন্যায় ক্ষতের দাগ এখনও শুকিয়ে যায়নি। উপরন্তু শুরু হয়েছে চতুর্থ দফা বন্যা। বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ দুই জেলা পড়েছে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে। অধিকাংশ মানুষ বলছেন, শত বছরের মধ্যেও এমন বন্যা দেখেননি। আবার কেউ কেউ বলছেন, এমন দৃশ্য সিলেট অঞ্চলে এখন বারবার দেখতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের বন্যার পর সিলেটে গত জুন মাসের ১৬ তারিখ থেকে বন্যার আঘাত শুরু হয়। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও জেলা-উপজেলার অনেক জায়গা এখনও নিমজ্জিত হয়ে আছে। বন্যার পানি এতো ধীর গতিতে নামার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। টানা বৃষ্টি হলেই বন্যার আতঙ্কে থাকবে সিলেট অঞ্চল।
গবেষণা তথ্য বলছে, অন্যান্য সময় বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও এবার একেবারে ধীরে নামছে পানি। এর পেছনে নদীর নাব্যতা সংকট, হাওরে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ও হাওর ভরাট হয়ে যাওয়া প্রভৃতিকে কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর এবং পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, সাধারণত সিলেটের পানি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদী দিয়ে ভৈরব হয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশে। গত কয়েক দশকে কালনী ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহের পথ অনেকটা রুদ্ধ হয়েছে। ভরাট হয়েছে হাওরও। তাই এখন বৃষ্টিপাত কমে এলেও বন্যার পানি সহজে নামছে না।
হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ মনে করেন, অতি বৃষ্টি ও ঢলের পানি ধরে রাখার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া এবং পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করায় সিলেট অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, হাওরে যেভাবে আগে পানি নামত এখন সেভাবে নামছে না। সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর যদি পানি ধারণ ক্ষমতা আগের মতো থাকত তবে সিলেটে পানি জমে থাকার সুযোগ পেত না। ভবিষ্যতে বন্যা এড়াতে সিলেটে নদী খনন করা হবে।
তবে নদী খনন যাতে কার্যকর হয় এবং নদী খনন করে মাটি যাতে আবার নদীর তীরেই ফেলে রাখা না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা।
তিনি বলেন, নদীর মাটি নদীতে ফেলে খনন নয়। কার্যকর নদী খননের উদ্যোগ নিতে হবে। এবার বন্যার ভয়াবহতা দেখে আমরা বুঝেছি, এমন বিপদ সামনে আরও আছে।