বন্যার পানি কমতে থাকায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় এক হাজার বানভাসি । জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন বানভাসিদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। প্রতিদিনই বাড়ি ফেরার এই তালিকায় আরো বানভাসি মানুষ যুক্ত হবেন বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন । এদিকে সব আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৯ জুন) জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জগন্নাথপুর মোট ১৪০ টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন বানভাসিরা। বেসরকারি হিসেব মতে, বিভিন্ন বিদ্যালয়, বাসাবাড়ি মিলিয়ে বন্যা কবলিত আশ্রয়হীন মানুষ প্রায় ১৮০ টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। অনেকের অভিযো্গ, যারা সরকারি বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন প্রতিদিন বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এাণ সামগ্রী পাচ্ছেন শুধু তারাই। কিন্তু আশ্রয়হীনদের মধ্যে যারা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের কাছে এাণ সামগ্রী পৌঁছানো্ হচ্ছেনা। এমনকি নেওয়া হচ্ছেনা কোন খোঁজখবরও। যার কারণে বলতে গেলে ত্রাণ থেকে এক রকম এখনও বঞ্চিত এসব বানভাসিরা।
জগন্নাথপুর গ্রামের তাপশ দাস বলেন – ‘সবাই স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্র ত্রাণ নিয়ে যান। আমরা যে পানি বন্দি আছি আমাদের খবর কেউ নেয় না। বন্যায় সবকিছু হারিয়ে আমরাও তো নি:স্ব। যার কারণে জীবন বাঁচাতে এভাবে আশ্রয় নিতে হয়েছে।’
জগন্নাথপুর গ্রামের চানাচুর বিক্রেতা প্রজেশ দাস বলেন ‘ ১০ দিন ধরে পানি বন্দি ছিলাম, কেউ দেখেনি। দোকান নিয়ে বাজারেও যেতে পারছিনা। এমন অবস্থায় ত্রাণই আমাদের বেঁচে থাকার ভরসা।’ শুধু তাপশ কিংবা প্রজেশ নয়, আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া অধিকাংশের মন্তব্যই ছিল প্রায় একই রকম। একদিকে ঘরছাড়া। অন্যদিকে কর্মহীন। সব মিলিয়ে যেন তাদের চোখে মুখে এখন শুধুই অন্ধকারের হাতছানি। তবে কিছু কিছু এলাকায় পানি কমে যাওয়ায় এর মধ্যে এদের অনেকে এরকম হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানি না কমায় যারা এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি তারা ঘরে ফেরার অপেক্ষায় আছেন ।
এদিকে বানভাসি মানুষের জন্য সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্ষম আরও সুশৃঙ্খল করতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় আলাদা সমন্বয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানায় তারা।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, সংশ্নিষ্ট জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন উপজেলা পর্যায়ে জগন্নাথপুর সমন্বয় কমিটির কাজ তদারকি করবেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো বানভাসি মানুষের পাশে থেকে এাণ সামগ্রী বিতরণ করছি। অনেকের বাড়ির পানি নেমে যাওয়ায় অনেকে বাড়ি ফিরছেন।